প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় দেশের সাম্প্রতিক শোকাবহ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে।
সভা শুরুর আগে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপোসহীন নেত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ম উপদেষ্টা আফম খালিদ হোসেন মোনাজাত পরিচালনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আগামীকাল বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একই সঙ্গে আগামীকাল এক দিনের সাধারণ ছুটির ঘোষণাও দেওয়া হয়।
সভায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে একটি আনুষ্ঠানিক শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবটি পাঠ করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, তথ্য উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান।
রাষ্ট্রীয় শোক পালনের তিন দিন দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের সব মিশনেও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। আগামীকাল বুধবার দেশের প্রতিটি মসজিদে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হবে। অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়গুলোতেও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে শোক বই খোলা হবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, সভায় বিশেষ আমন্ত্রণে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অংশ নেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বেগম খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাসহ সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আগামীকাল বুধবার বাদ জোহর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে তাঁকে শহীদ রাষ্ট্রপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের পাশে দাফন করা হবে।
সভায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও দাফনসংক্রান্ত সব বিষয়ে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আজকে গভীর শোকের সময় আমরা সবাই সমবেত হয়েছি। পুরো জাতি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া করছিল, যাতে তিনি আমাদের সাথে আরও অনেক বছর থাকেন। আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। জাতির পক্ষ থেকে আমরা তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। তার দাফন ও জানাজার বিষয়ে যা যা কিছু প্রয়োজন সব ধরনের সহায়তা সরকার করবে।’
স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ উনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসে। সেদিন তিনি খুব উৎফুল্ল ছিলেন। আমার সঙ্গে অনেকক্ষণ গল্প করেছেন। আমার, আমার স্ত্রীর স্বাস্থ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। তিনি নিজে অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু সবার সুস্থতা নিয়ে তার উদ্বেগ ছিল। তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। জাতির এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যখন আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে এসময় তার উপস্থিতি আমাদের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। তার চলে যাওয়া জাতির বিরাট ক্ষতি।’
সিএ/এএ


