মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়ে বিশ্বের সামনে দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরছেন মডেল ও অভিনেত্রী তানজিয়া জামান মিথিলা। আন্তর্জাতিক এই মঞ্চে তিনি দেশের গৌরবময় পরিচয় বহন করে উপস্থাপন করেছেন জামদানি শাড়ি, যা বাংলাদেশের শত বছরের রাজকীয় ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। জাতীয় পোশাক হিসেবে মিথিলার এই বাছাই দেশীয় কারুশিল্পের অসামান্য সৌন্দর্য তুলে ধরেছে।
মিথিলা জানান, এই শাড়িটি পুরোপুরি হাতে তৈরি এবং এর প্রতিটি সুতায় লুকিয়ে আছে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও শিল্পকলা। তার ভাষায়, রাজকীয় জামদানির প্রতিটি বুননে রয়েছে বাংলার গভীর সংস্কৃতি এবং সময়ের পরম্পরা। তিনি আরও বলেন, এই শাড়ি কোনো সাধারণ পোশাক নয়; এটি ইতিহাস, কৃষ্টি ও সৌন্দর্যের সম্মিলিত পরিচয় বহন করে।
বাংলার প্রসিদ্ধ তাঁতশিল্পের অনন্য নিদর্শন এই জামদানির শিকড় ১৭ শতকের মুঘল যুগে। সেই সময় মুঘল সম্রাট, নবাব এবং অভিজাত শ্রেণির আভিজাত্যের প্রতীক ছিল জামদানি। বিশেষ করে রাণীদের পোশাক এবং অভিজাতদের রাজকীয় সমাহারে ব্যবহৃত হতো এই বিখ্যাত বুননশিল্প। বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরঘেঁষা তাঁতগ্রামগুলোতে এখনো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে এই শিল্প।
মিথিলার পরা জামদানিটি সেরা মানের সুতির তন্তু দিয়ে বোনা, সঙ্গে স্বর্ণালী জরি ও সূক্ষ্ম নকশার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে অপূর্ব এক পোশাক। শাড়িটির ওপর ফুটে উঠেছে জাতীয় ফুল শাপলা—যা সৌন্দর্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের পরিচয়কে আরও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরে। মিথিলার সোনার অলঙ্কারেও রাখা হয়েছে একই শাপলা মোটিফ, যা পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য এনে দিয়েছে অনন্য শৈল্পিকতা। এই বিশেষ পোশাকটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ১২০ দিনেরও বেশি। এর নকশা করেছেন ডিজাইনার আফ্রিনা সাদিয়া সৈয়দা, এবং অলঙ্কারের নকশা করেছেন ৬ ইয়ার্ডস স্টোরির লরা খান।
২০১৩ সালে ইউনেস্কো জামদানিকে মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই স্বীকৃতি শুধু জামদানি শাড়ির শিল্পমূল্যকেই তুলে ধরেনি, বরং বাংলাদেশের ঐতিহ্যকে বিশ্বের সামনে উজ্জ্বল করে তুলেছে। মিস ইউনিভার্স মঞ্চে মিথিলার উপস্থাপন সেই স্বীকৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
সিএ/এমআরএফ


