ইংরেজি নববর্ষের সময় মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা বারোটায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে এক ধরনের আলাদা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে বাস্তবতা হলো, পৃথিবীর সব মানুষ একই মুহূর্তে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পারেন না। কারণ পৃথিবী গোলাকার এবং নিজ অক্ষে ঘুরতে থাকার ফলে সূর্যের আলো ও সময় সব জায়গায় একসঙ্গে পৌঁছায় না।
এই বাস্তবতার ভিত্তিতেই বিশ্বজুড়ে গড়ে উঠেছে সময় অঞ্চল বা টাইম জোন ব্যবস্থা। এই সময় অঞ্চল অনুসারেই পৃথিবীতে কোথাও আগে, কোথাও পরে ইংরেজি নববর্ষ শুরু হয়। সময় গণনার এই নিয়ম মেনে সবার আগে ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপিত হয় প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত কিরিবাস দ্বীপরাষ্ট্রের কিছু অংশে।
বিশেষ করে কিরিবাসের লাইন আইল্যান্ডস অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে এগিয়ে থাকা সময় অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। আন্তর্জাতিক সময়রেখার পূর্ব দিকে অবস্থান করার কারণে সেখানে ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে নতুন বছর সবার আগে শুরু হয়। এ কারণেই কিরিবাসকে নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের দেশ হিসেবে ধরা হয়।
এর ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায় ইংরেজি নববর্ষের শেষ উদ্যাপনে। পৃথিবীর সবচেয়ে পরে নতুন বছর আসে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই রাজ্য ও প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু দূরবর্তী দ্বীপাঞ্চলে। আন্তর্জাতিক সময়রেখার পশ্চিম দিকে অবস্থান করায় এসব অঞ্চলে নতুন বছর পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়। ফলে পৃথিবীর এক প্রান্তে যখন ১ জানুয়ারির সকাল, অন্য প্রান্তে তখনো ৩১ ডিসেম্বরের সন্ধ্যা চলতে থাকে।
এই সময়গত পার্থক্যের মূল কারণ আন্তর্জাতিক সময়রেখা বা ইন্টারন্যাশনাল ডেট লাইন। প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝ দিয়ে অতিক্রম করা এই কাল্পনিক রেখা পার হলেই তারিখ একদিন এগিয়ে যায় বা পিছিয়ে যায়। তাই একই মুহূর্তে পৃথিবীর দুই ভিন্ন স্থানে আলাদা তারিখ দেখা যেতে পারে।
পৃথিবীকে মোট ২৪টি প্রধান সময় অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সময় অঞ্চল প্রায় ১৫ ডিগ্রি দ্রাঘিমাংশ জুড়ে বিস্তৃত। পৃথিবী ২৪ ঘণ্টায় একবার নিজ অক্ষে ঘোরে, অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৫ ডিগ্রি ঘোরে। এই বৈজ্ঞানিক হিসাবের ওপর ভিত্তি করেই সময় অঞ্চল নির্ধারিত হয়েছে।
ইংরেজি নববর্ষে এই সময় ব্যবস্থার প্রভাব সবচেয়ে স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে যখন নতুন বছরের উৎসব শুরু হয়, তখন ইউরোপের অনেক দেশে পুরোনো বছরের শেষ বিকেল চলছে। আবার ইউরোপে যখন নতুন বছর শুরু হয়, তখন আমেরিকার বড় অংশ এখনো ৩১ ডিসেম্বরের অপেক্ষায় থাকে।
এই সময়গত পার্থক্য শুধু উৎসবের ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, বিমান চলাচল এবং বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সময় অঞ্চল না থাকলে এক দেশের সকাল আর অন্য দেশের রাতের হিসাব করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ত।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, কেন আন্তর্জাতিক সময়রেখা একেবারে সোজা নয়। এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক সুবিধার বিষয়। কিছু দেশ ও দ্বীপপুঞ্জকে একই দিনে রাখার সুবিধার্থে এই কাল্পনিক রেখাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাঁকানো হয়েছে। কিরিবাস তার একটি বড় উদাহরণ, যেখানে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য সময়রেখার অবস্থান পরিবর্তন করা হয়েছিল।
এই কারণেই দেখা যায়, ইংরেজি নববর্ষ উদ্যাপনের ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম ও শেষ দেশের মধ্যে প্রায় ২৬ ঘণ্টার ব্যবধান থাকে। কিরিবাসে যখন নতুন বছরের আতশবাজি আকাশ রাঙায়, তখন হাওয়াইয়ে সেই একই উৎসব শুরু হতে সময় লাগে প্রায় একদিন।
সিএ/এএ


