জুলাই ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে। রায় ঘোষণার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। সোমবার (১৭ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনার রায় ভারত ‘‘নজরে নিয়েছে’’ এবং ‘‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’’ রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা সর্বদা সকল অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করব।’’ তবে এই বিবৃতিতে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে হস্তান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশের আহ্বানের কোনো সরাসরি জবাব দেওয়া হয়নি। মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, ‘‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’

রায় ঘোষণার দিন আদালতে উপস্থিত ছিলেন নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এবং আইনজীবীরা। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় দিয়েছেন। আদালত জানিয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অন্য দুটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এরপর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতকে আহ্বান জানিয়ে বলেছে, হস্তান্তর চুক্তি অনুযায়ী তারা দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশের হাতে হস্তান্তর করুন। মন্ত্রণালয় বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, ‘‘মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল হবে।’’
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করার সম্ভাবনা কম। কাতারভিত্তিক আল জাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘‘হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রত্যাশিত ছিল। তবে ভারত বাংলাদেশের এই পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে প্রত্যর্পণ করবে না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ভারত কোনও অবস্থাতেই তাকে প্রত্যর্পণ করবে না। গত দেড় বছরে আমাদের দেখায়, ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক সময়ই ভঙ্গুর হয়েছে।’’
শ্রীরাধা দত্ত উল্লেখ করেছেন, ‘‘দেশের ভেতরের পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছিল, হাসিনার কঠিন বিচার হবে। ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়া অনুসারেই পরিচালিত হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরা এ বিষয়ে একমত। নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘটিত অপরাধের প্রমাণ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী সরাসরি গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ পাল্টা-বয়ান তৈরির চেষ্টা করবে, কিন্তু সার্বিকভাবে বাংলাদেশিরা মনে করেন, হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।’’
সিএ/এমআরএফ


