নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, তেলাপোকা কেবল ঘরের অপ্রিয় পোকা নয়, বরং মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগী বাতাসকেও মারাত্মকভাবে দূষিত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলাইনা স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় উঠে এসেছে, যেসব বাসাবাড়িতে তেলাপোকার উপদ্রব বেশি, সেখানে অ্যালার্জেন ও ব্যাকটেরিয়াজনিত টক্সিন—এন্ডোটক্সিনের মাত্রাও অনেক বেশি পাওয়া গেছে।
গবেষকদের মতে, তেলাপোকার দেহ ও মল থেকে নির্গত অ্যালার্জেন ও ব্যাকটেরিয়ার এন্ডোটক্সিন বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এসব কণা শ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করলে শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ, অ্যালার্জি ও হাঁপানির মতো সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ তেলাপোকা আবর্জনা থেকে শুরু করে মানুষের অবশিষ্ট খাবার সবই খেয়ে থাকে, ফলে এদের অন্ত্রে নানা ধরনের জীবাণু থাকে এবং ঘরে চলাফেরা করার সময় সেগুলো ছড়িয়ে পড়ে।
গবেষণায় বলা হয়, তেলাপোকা রয়েছে এমন বাড়িতে এন্ডোটক্সিনের সবচেয়ে বড় উৎস ওই পোকাগুলোই। বিশেষ করে স্ত্রী তেলাপোকা বেশি খাবার গ্রহণ করে বলে তাদের মলে এন্ডোটক্সিনের মাত্রা দ্বিগুণ পাওয়া গেছে। রান্নাঘরে এন্ডোটক্সিনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, কারণ সেখানে খাবারের উৎস তুলনামূলক সহজলভ্য।
গবেষণাটি উত্তর ক্যারোলাইনার র্যালি শহরের বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে করা হয়। তেলাপোকার সংখ্যা ও বাতাসে থাকা অ্যালার্জেন এবং এন্ডোটক্সিনের মাত্রা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উপদ্রব যত বেশি, ঘরের বাতাস তত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। গবেষণা দলটি পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পর ঘরের বাতাসে ক্ষতিকর উপাদান কতটা কমে আসে, সেটিও পর্যবেক্ষণ করেছে।
ফলাফল বলছে, যেসব অ্যাপার্টমেন্টে পোকামাকড় সম্পূর্ণ নির্মূল করা হয়েছে, সেখানে অ্যালার্জেন ও এন্ডোটক্সিনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। বিপরীতে, যেখানে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, সেখানে দূষণের মাত্রা অপরিবর্তিত থাকে। গবেষকরা বলছেন, তেলাপোকার সংখ্যা সামান্য কমানোতে কার্যকর ফল আসে না, সম্পূর্ণ নির্মূল করতেই ঘরের বাতাস স্বাভাবিক হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ গবেষণার ফল শিশুদের শ্বাসতন্ত্রের ঝুঁকির ব্যাখ্যা দিতে পারে, কারণ তেলাপোকার উপদ্রব সাধারণত কম আয়ের ও বহুসদস্যের পরিবারে বেশি দেখা যায়। গবেষণাটি প্রকাশ হয়েছে ‘জার্নাল অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল ইমিউনোলজি: গ্লোবাল’ সাময়িকীতে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অংশ নিয়েছেন।
সিএ/এমআরএফ


