Home আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি: মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন মোড়

ফিলিস্তিনকে ফ্রান্সের স্বীকৃতি: মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন মোড়

0
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে এক শিশু। বার্সিলোনা, স্পেন, ২০ জানুয়ারি, ২০২৪ ছবি: এপি

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর নেতৃত্বে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে। যদিও গাজায় চলমান সংঘাত কিংবা ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের তাৎক্ষণিক বাস্তবতা বদলাবে না, তবু বিশ্বমঞ্চে এই পদক্ষেপের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

জি-৭ জোটের প্রথম দেশ হিসেবে ফ্রান্সের এই স্বীকৃতি শুধু সাহসী কূটনৈতিক অবস্থান নয়, বরং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বার্তাও বহন করে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট তাঁর মেয়াদের শেষ দিকে এসে ‘শান্তি, সহাবস্থান এবং ন্যায্যতা’র কণ্ঠস্বর হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাচ্ছেন। তাঁর মতে, বর্তমান বাস্তবতায় কূটনৈতিক সমাধান ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।

এদিকে ইসরায়েল এই পদক্ষেপকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত’ করার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন এবং আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এটি নতুন প্রক্সি যুদ্ধের পথ খুলে দেবে। তাঁর মতে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা ইসরায়েলের পাশের কোনো শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র নয়, বরং তাদের ধ্বংসের প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে।

তবে মাখোঁ স্পষ্ট করে বলেছেন, সহিংসতা বা ইসরায়েলি আগ্রাসন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর মতে, গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় চলছে এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি গড়ে তোলার যে প্রবণতা, তা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে দিনে দিনে আরও অসম্ভব করে তুলছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদিও ১৪০টির বেশি দেশ ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, ফ্রান্সের মতো জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং পারমাণবিক শক্তিধর দেশের এই সিদ্ধান্তের আলাদা ও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। এখন ইউরোপের অন্য শক্তিধর দেশগুলো—বিশেষত যুক্তরাজ্য—এ পথে হাঁটে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।

ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যানালাইসিসের বিশ্লেষক ডেভিড রিগুলে-রোজে বলছেন, মাখোঁর এই পদক্ষেপ নজির তৈরি করতে পারে এবং অন্য দেশগুলোকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। একই সঙ্গে চ্যাথাম হাউসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ইয়োসি মেকেলবার্গের মতে, এটি কিছুটা গতি তৈরি করলেও এককভাবে যথেষ্ট নয়।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের মধ্যে চীন ও রাশিয়া এর আগে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলেও পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ফ্রান্সই প্রথম। মাখোঁ যদি সেপ্টেম্বরের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেন, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য হয়ে পড়বে সংখ্যালঘু—যারা এখনো এই স্বীকৃতি দিতে নারাজ।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যে মাখোঁর সিদ্ধান্তকে তুচ্ছ করে বলেছেন, এতে ‘কিছুই বদলাবে না’। অন্যদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এখনো সরাসরি অবস্থান নেননি, তবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি একটি ‘অবিচ্ছেদ্য অধিকার’।

সব মিলিয়ে, ফ্রান্সের এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক বাস্তবতা বদলাবে না হলেও মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনায় একটি নতুন গতি তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয়—এ গতি কতদূর যেতে পারে, এবং বিশ্ব কতটা প্রস্তুত একটি ন্যায্য ও স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে।

NO COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Exit mobile version