অর্থনীতির অন্যান্য সূচকে চাপ থাকলেও প্রবাসী আয়ে ধারাবাহিক দাপট দেখাচ্ছে রেমিট্যান্স। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে গতি ও আস্থার যে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে, তা ডিসেম্বরের শেষভাগে এসে রেকর্ডের কাছাকাছি পৌঁছেছে। শেখ হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই রেমিট্যান্সে যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, চলতি মাসের শেষ দিকে তা নতুন ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে।
চলতি মাসের প্রথম ২৯ দিনে দেশে এসেছে ৩ বিলিয়ন ৪ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স। দেশীয় মুদ্রায়, প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৭ হাজার ১০০ কোটি ২০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এটি দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সপ্রবাহ। এর আগে গত বছর রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ডিসেম্বরের প্রথম ২৮ দিনে দেশে এসেছে ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৫১ কোটি ৫০ লাখ ডলার বেশি। গত বছর একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার।
চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ পর্যন্ত মোট রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৬০৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার বেশি। এ সময়ে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর ওপর প্রণোদনা, বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহ এবং এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর সক্রিয় ভূমিকার কারণে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
অন্যদিকে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের ৬ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ৩৬৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বেশি। এই হিসাবে অর্থবছরভিত্তিক প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্স এসেছে— জুলাইয়ে ২৪৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, আগস্টে ২৪২ কোটি ১৯ লাখ ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, অক্টোবরে ২৫৬ কোটি ৩৫ লাখ ডলার এবং নভেম্বরে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।
এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে একক মাস হিসেবে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল, যা ওই অর্থবছরের রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত। পুরো অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
সিএ/এএ


