ইসরায়েল সোমালিল্যান্ডকে সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ওঠা সমালোচনাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। মঙ্গলবার দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণের বিষয়ে কোনো বহিরাগত শক্তির প্রশ্ন তোলার অধিকার নেই এবং এই সিদ্ধান্তে তারা অটল থাকবে।
এর আগে শুক্রবার ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়, তারা সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। ১৯৯১ সালে একতরফাভাবে সোমালিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা দেওয়া স্বঘোষিত এই প্রজাতন্ত্রের জন্য এটি ছিল প্রথম কোনো দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে আফ্রিকান ইউনিয়ন, মিসর ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত সোমালিয়ার সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি আস্থা প্রকাশ করে ইসরায়েলের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে মন্তব্য করেছে।
তবে সমালোচনার পাশাপাশি ইসরায়েল তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আংশিক সমর্থনও পেয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি সোমালিল্যান্ডকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরোধিতা করেন।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিয়ন সা’আর মঙ্গলবার এক্সে বলেন, ‘ইসরায়েল কার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখবে—তা কোনো অন্য দেশ নির্ধারণ করবে না।’ তার এই মন্তব্য আন্তর্জাতিক সমালোচনার প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের দৃঢ় অবস্থানকেই তুলে ধরে।
সা’আর সোমালিল্যান্ড ইস্যুতে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের উপপ্রতিনিধি ট্যামি ব্রুসের বক্তব্যের প্রতিও সমর্থন জানান। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে সোমবার বক্তব্য দিতে গিয়ে ব্রুস পরিষদের সদস্যদের সমালোচনা করেন এবং বলেন, রাষ্ট্র স্বীকৃতি নিয়ে তাদের অবস্থান ছিল অসংগত।
ব্রুস বলেন, ‘চলতি বছরের শুরুর দিকে কয়েকটি দেশ—এই পরিষদের কিছু সদস্যসহ—একতরফাভাবে একটি অস্তিত্বহীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, অথচ এই পরিষদের ক্ষোভ প্রকাশে কোনো জরুরি বৈঠক ডাকা হয়নি।’ তার এই মন্তব্য সোমালিল্যান্ড ইস্যুতে দ্বৈত নীতির অভিযোগকে সামনে নিয়ে আসে।
চলতি বছরের শুরুতে ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন করে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
সোমালিল্যান্ড ১৯৯১ সালে সোমালিয়া থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পর দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। তবে কোনো দেশ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দেওয়ায় অঞ্চলটি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে একপ্রকার উপেক্ষিতই ছিল, যতক্ষণ না ইসরায়েল এই ঘোষণা দেয়।
আফ্রিকার শিং অঞ্চলে অবস্থিত সোমালিল্যান্ডের উত্তরাঞ্চল ইয়েমেনের ওপারে এডেন উপসাগরের তীরবর্তী এবং লাল সাগরের গুরুত্বপূর্ণ নৌপথের কাছে অবস্থান করছে। এই ভৌগোলিক অবস্থান অঞ্চলটিকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে, যা ইসরায়েলের আগ্রহের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সিএ/এএ


