নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফার্স্ট লেডি হতে যাচ্ছেন রামা দুয়াজি। মঙ্গলবার রাতে জোহরান মামদানি মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন এই তরুণী শিল্পী। বিজয়ের পর ভাষণে স্ত্রী রামার প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মামদানি।
তিনি বলেন, “আমার অসাধারণ স্ত্রী রামা—এই মুহূর্তে এবং প্রতিটি মুহূর্তে আমি তার চেয়ে বেশি কাউকে পাশে চাই না।”
সিরীয় বংশোদ্ভূত রামা দুয়াজি নিউইয়র্কভিত্তিক একজন চিত্রশিল্পী, যিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সমাজজীবনের বাস্তবতা নিজের চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তোলেন। তার শিল্পকর্ম বিবিসি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, ভাইস এবং লন্ডনের টেট মডার্ন জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়েছে।
তিন মাস আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুয়াজি ও মামদানি। ডেটিং অ্যাপ হিঞ্জ-এ তাদের পরিচয় হয়েছিল। এক সাক্ষাৎকারে মামদানি রসিকতা করে বলেন, “তার মানে, ডেটিং অ্যাপগুলোতে এখনো আশার আলো আছে।”
নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে দুয়াজিকে প্রকাশ্যে খুব কমই দেখা গিয়েছিল, যা নিয়ে বিরোধীরা ‘স্ত্রীকে আড়াল করার’ অভিযোগ তোলে। পরে মে মাসে বিয়ের ছবি শেয়ার করে মামদানি বলেন, “আমার মতের সমালোচনা করতে পারেন, কিন্তু আমার পরিবারকে নয়।”
সিএনএনের তথ্যমতে, রামা দুয়াজি ছিলেন মামদানির প্রচারণার ভিজ্যুয়াল স্ট্র্যাটেজির মূল পরিকল্পনাকারী। পোস্টার, রঙ ও ফন্টের নকশায় ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
টেক্সাসের হিউস্টনে জন্ম নেওয়া দুয়াজি শৈশবে পরিবারসহ দুবাই চলে যান এবং পরে কাতারে পড়াশোনা করেন। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে তার পারিবারিক শেকড়। তিনি ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক এবং নিউইয়র্কের স্কুল অব ভিজ্যুয়াল আর্টস থেকে ইলাস্ট্রেশনে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন।
তার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, দুয়াজি পোর্ট্রেট ও গতিশীলতার মাধ্যমে ভ্রাতৃত্ব, স্থানচ্যুতি ও সামাজিক অভিজ্ঞতার সূক্ষ্ম দিক অন্বেষণ করেন। তার বেশিরভাগ কাজ সাদা-কালো রঙে আঁকা, যা আরব বিশ্বের বাস্তবতা প্রতিফলিত করে।
সামাজিক মাধ্যমে তিনি আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ, ইসরায়েলি আগ্রাসন ও ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধনের সমালোচনায় সরব। ২০২২ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ডকুমেন্টারি “হু কিল্ড মাই গ্র্যান্ডফাদার”-এ তার কিছু শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়।
তার এক বন্ধু হাসনাইন ভাট্টি বলেন, “সে আমাদের আধুনিক প্রিন্সেস ডায়ানা।” অন্যদিকে নিউইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, বাড়তে থাকা মনোযোগে দুয়াজি আনন্দিত হলেও কিছুটা বিভ্রান্তও বোধ করছেন।
ইয়াং ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দুয়াজি বলেন, “নিউইয়র্কের বর্তমান পরিস্থিতি অন্ধকারময়। আমি আমার পরিবার ও বন্ধুদের জন্য চিন্তিত। তবে শিল্প ও কণ্ঠের মাধ্যমে আমি যুক্তরাষ্ট্র, ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার বাস্তবতা তুলে ধরতে চাই।”
নিনা সিমোনের উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, “একজন শিল্পীর কর্তব্য হলো নিজের সময়কে প্রতিফলিত করা।” তার মতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা সবার দায়িত্ব, আর শিল্প সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম।
সিএ/এমআরএফ


