প্যান্ডেল ঘেরা বাড়ি, বিয়ের সাজে কনে, অতিথিদের ভোজ—সব মিলিয়ে চলছিল জমজমাট বিয়ের আয়োজন। কিন্তু মুহূর্তেই থেমে যায় সে আয়োজন। কারণ কনে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী, আর বর বয়সে ২৫। ফলে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বাল্যবিয়ে থামিয়ে বরকে পাঠানো হলো কারাগারে।
গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর নতুনপাড়া গ্রামে বুধবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বর বাহারুল ইসলামকে (২৫) দুই মাসের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
কনে কী বললেন?
শিক্ষার্থী ইতি খাতুন, নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বাল্যবিয়ে থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি বলেন,
“অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়ার ইচ্ছে আমার। কিন্তু পরিবার ও প্রতিবেশীদের চাপে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। ইউএনও সময়মতো এসে বিয়ে বন্ধ করেছেন, এজন্য কৃতজ্ঞ। এখন আবার স্কুলে যেতে পারব, সহপাঠীদের সঙ্গে খেলতে পারব—এই ভেবে আনন্দ হচ্ছে।”
বরের পরিচয়
গ্রেপ্তার হওয়া বর বাহারুল ইসলাম গুরুদাসপুর উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের নবির উদ্দিনের ছেলে। পেশায় ব্যবসায়ী। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আয়ুব আলী জানিয়েছেন, কনে দেখতে সুন্দর হওয়ায় দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। যদিও তিনি একাধিকবার বারণ করেছিলেন, কিন্তু কনের পরিবার তা মানেনি।
শিক্ষক ও প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া
নাজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, ইতি পড়াশোনায় যেমন ভালো, খেলাধুলাতেও সমান পারদর্শী। অথচ পরিবার তাকে জোর করে বিয়ে দিতে যাচ্ছিল। বাল্যবিয়ে বন্ধ করায় তিনি খুশি। বিষয়টি শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সামনে আলোচনা করা হবে, যাতে তারা সচেতন হয় এবং প্রতিবাদী হতে পারে।
ইউএনও ফাহমিদা আফরোজ বলেন,
“গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বরকে হাতেনাতে ধরা হয়। বাল্যবিয়ের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো অল্প বয়সে মা হওয়া। এতে জরায়ু ছিঁড়ে যাওয়া, ক্যানসারের আশঙ্কাসহ নানা জটিলতা তৈরি হয়। পরিবারগুলো না জেনে মেয়েদের ভয়াবহ ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিদ্যালয়গুলোতে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো হবে। কিশোরীরা যদি নিজের বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করতে পারে, তাহলে তাদের পুরস্কৃতও করা হবে।
সিএ/এমআরএফ