ইসলাম ধর্মে উপার্জন শুধু জীবিকার মাধ্যম নয়, এটি এক প্রকার ইবাদত। মুসলমানের প্রতিটি রোজগার যেন হালাল, ন্যায়নিষ্ঠ ও সততার সঙ্গে হয়—ইসলাম এরই শিক্ষা দেয়। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় হালাল আয়ের পথ ধরে চলা সহজ নয়, তবু এই পথেই রয়েছে বরকত, শান্তি ও পরকালের সফলতার নিশ্চয়তা।
হালাল রুজি মানে শুধু হারাম বর্জন নয়, বরং নৈতিকতা, মানবকল্যাণ ও আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। নিচে হালাল উপার্জনের জন্য ১৩টি বাস্তবমুখী নীতি তুলে ধরা হলো—
১. ব্যবসায় নৈতিকতার সীমানা মেনে চলা
প্রত্যেক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও ন্যায়ের চর্চা করা ইসলামের মৌলিক নির্দেশ। দাম বাড়িয়ে কারসাজি, অন্যায্য প্রতিযোগিতা বা মানুষের দুর্বলতা কাজে লাগানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চুক্তি স্পষ্ট রাখা ও নিয়মিত ব্যবসার মূল্যায়ন করা অপরিহার্য।
২. প্রত্যাশার চেয়েও বেশি সেবা দেওয়া
রাসুলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন ‘ইহসান’—অর্থাৎ কাজের শ্রেষ্ঠত্বে পৌঁছানো। গ্রাহকের প্রত্যাশার চেয়ে উন্নত সেবা ও সময়নিষ্ঠতা হালাল আয়ের বড় গুণ। এতে বরকত যেমন বাড়ে, তেমনি আস্থাও গড়ে ওঠে।
৩. জুয়া ও জল্পনামূলক ব্যবসা থেকে দূরে থাকা
ইসলামে জুয়া বা ‘মাইসির’ ও অনিশ্চয়তা বা ‘গারার’ নিষিদ্ধ। তাই লটারি, বেটিং বা ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেডিং পরিহার করে বাস্তব উৎপাদনমূলক খাতে বিনিয়োগ করতে হবে—যেমন হালাল শেয়ারবাজার বা রিয়েল এস্টেট।
৪. হারাম পণ্য বা সেবার সঙ্গে যুক্ত না থাকা
মদ, শূকরজাত দ্রব্য বা সুদভিত্তিক আর্থিক সেবার সঙ্গে জড়িত থাকা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম। উৎপাদন, পরিবহন, বিপণন—কোনো ধাপেই এসব পণ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা চলবে না।
৫. সততা বজায় রাখা
সততা ইসলামী ব্যবসার মেরুদণ্ড। মিথ্যা প্রচারণা, পণ্যের গুণাগুণ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো বা ভেজাল দেওয়া ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। স্বচ্ছ লেনদেন বজায় রাখা ঈমানের অংশ।
৬. বেআইনি ও অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকা
কর ফাঁকি, ঘুষ, চোরাচালান বা আইন ফাঁকি দেওয়া ইসলাম ও রাষ্ট্রীয় উভয় আইনে অপরাধ। সঠিক নিয়মে ব্যবসা পরিচালনা করলে সুনাম ও স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।
৭. ঘুষ ও দুর্নীতি থেকে দূরে থাকা
ঘুষ দেওয়া বা নেওয়া উভয়ই ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। ন্যায়ের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থে প্রভাব খাটানো অন্যায়। ব্যবসায় জবাবদিহিতা ও সততার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি।
৮. বিজ্ঞাপনে সত্যতা বজায় রাখা
প্রচার বা বিজ্ঞাপনে অতিরঞ্জন বা বিভ্রান্তিকর দাবি করা যাবে না। গ্রাহক যা প্রতিশ্রুতি পান, বাস্তবেও তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. আলেমদের পরামর্শ নেওয়া
নতুন ব্যবসা বা প্রযুক্তি যেমন ক্রিপ্টো, ফিনটেক ইত্যাদি ক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার আগে অভিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ নেওয়া উচিত, যাতে সন্দেহজনক বা হারাম খাতে না জড়ানো হয়।
১০. নৈতিক ভোক্তা হওয়া
শুধু আয় নয়, খরচেও নৈতিকতা জরুরি। এমন প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য কিনতে হবে যারা শ্রমিকের অধিকার রক্ষা করে, পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন এবং হালাল নীতি মেনে চলে।
১১. পারিবারিক ও সামাজিক দায় পরিশোধ
পরিবারের খরচ, কর্মচারীর বেতন, কর ও যাকাত যথাসময়ে পরিশোধ করা ঈমানের অংশ। শ্রমিকের মজুরি বিলম্ব ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে।
১২. ন্যায় ও সমতা বজায় রাখা
কর্মক্ষেত্রে, চুক্তিতে ও মুনাফায় সকলের সঙ্গে ন্যায়ের আচরণ করতে হবে। কর্মচারী, গ্রাহক ও অংশীদারের সঙ্গে সমান আচরণ ইসলামী চরিত্রের প্রতিফলন।
১৩. আয় থেকে দান করা
দান বা সদকা সম্পদকে পরিশুদ্ধ করে এবং সমাজে ভারসাম্য আনে। নিয়মিতভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দরিদ্র সহায়তায় অনুদান দেওয়া উচিত।
হালাল রুজি কেবল বৈধ উপার্জন নয়—এটি এক গভীর আত্মিক দায়িত্ব। এতে যেমন দুনিয়ার শান্তি আসে, তেমনি পরকালের পুরস্কারও অর্জিত হয়। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই হালাল আয়ের পথে চলা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
সূত্র: হালাল টাইমস
সিএ/এমআরএফ

                                    
