বিশ্ববরেণ্য সুফি আলেম, নকশবন্দি তরিকার প্রভাবশালী শায়খ ও ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা জুলফিকার আহমদ নকশবন্দি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) পাকিস্তানের লাহোরে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আগামীকাল সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর ২টায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত জামিয়া মাহাদুল ফকির আল-ইসলামী প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানানো হয়েছে।
মাওলানা জুলফিকার আহমদ নকশবন্দি নকশবন্দি তরিকার একজন প্রভাবশালী সুফি শায়খ হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত ছিলেন। ইসলামী আধ্যাত্মিকতা, আত্মশুদ্ধি ও তাসাউফচর্চায় তাঁর অবদান মুসলিম বিশ্বে বিশেষভাবে স্বীকৃত। দেওবন্দি আলেমদের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল এবং তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইসলামি মহলে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হতেন।
১৯৫৩ সালের ১ এপ্রিল পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ঝং জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে ১৯৭২ সালে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একজন পেশাদার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন জিমন্যাস্টিকস, ফুটবল ও সাঁতারে দক্ষ ক্রীড়াবিদ; বিভিন্ন পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন ও দলের ক্যাপ্টেন হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
৪০ বছর বয়সে তিনি পেশাগত জীবন থেকে অবসর নিয়ে পুরোপুরি দ্বীনি শিক্ষা, দাওয়াত ও তাসাউফচর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি একাধারে কোরআনের হাফেজ, আলেমে দ্বীন, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং নকশবন্দি তরিকার শায়খ হিসেবে এজাজতপ্রাপ্ত ছিলেন। বহুমাত্রিক জ্ঞান, আধ্যাত্মিক গভীরতা ও ব্যক্তিত্বের জন্য তিনি ছিলেন এক বিরল গুণাবলির অধিকারী।
মাওলানা জুলফিকার আহমদ নকশবন্দি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ৫০০ মুসলিম ব্যক্তিত্বের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় ইসলাম, আত্মশুদ্ধি, তাসাউফ ও নৈতিকতা বিষয়ে ১১৮টি গ্রন্থ রচনা করেন। এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আফ্রিকার ৫০টিরও বেশি দেশ সফর করে তিনি ইসলাম ও আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রচার করেন এবং নিয়মিত বয়ান ও দরস প্রদান করতেন।
তাঁর ইন্তেকালে ইসলামী অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশ-বিদেশের আলেম, মাশায়েখ ও ইসলামী চিন্তাবিদরা তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করেছেন। মুসলিম উম্মাহ একজন অভিভাবকসুলভ আলেম ও সুফি শায়খকে হারাল বলে শোক প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
সিএ/এএ


