বর্তমান সময়ে নানা কারণে অনেক মানুষ হঠাৎ দুর্বল হয়ে পড়ছেন। বারবার মাথা ঘোরা, অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে যাওয়া কিংবা সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগাকে অনেকেই গুরুত্ব দেন না। কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, এসব লক্ষণ শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে।
হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকায় থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন, যা শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে। এর মাত্রা কমে গেলে শরীর পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না। ফলে দীর্ঘ সময় ধরে দুর্বলতা, অবসাদ ও কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।
বিশ্বজুড়ে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া বা অ্যানিমিয়া একটি বড় স্বাস্থ্যসমস্যা হিসেবে পরিচিত। বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, আয়রনের ঘাটতি এবং পুষ্টিকর খাবারের অভাবকে এর প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা আয়রন ট্যাবলেট সেবনের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা দীর্ঘদিন ওষুধের ওপর নির্ভরশীলতা এড়াতে অনেকেই প্রাকৃতিক উপায়ে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর পথ খুঁজছেন। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা কিছু নির্দিষ্ট খাবার নিয়মিত খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে কার্যকর প্রাকৃতিক খাবারের তালিকায় বিটরুট বা বিটকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা। বিটরুটে রয়েছে আয়রন, ফলিক এসিড, ফাইবার এবং একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন, যা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে এতে থাকা ভিটামিন সি শরীরে আয়রন শোষণকে আরও সহজ করে তোলে। এই কারণে অনেকেই বিটরুটকে প্রাকৃতিক অক্সিজেন বুস্টার হিসেবে উল্লেখ করেন।
বিটরুটের উপকারিতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণাও ইতিবাচক ফলাফল দেখিয়েছে। ২০২১ সালে অ্যাক্সেস ম্যাকেডোনিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, অ্যানিমিয়ায় ভোগা কিশোরীরা টানা দুই সপ্তাহ প্রতিদিন বিটরুটের রস পান করলে তাদের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের গড় হিমোগ্লোবিন ১১.৪৭ গ্রাম প্রতি ডেসিলিটার থেকে বেড়ে ১২.০২ গ্রাম প্রতি ডেসিলিটারে পৌঁছায়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সহজেই বিটরুট যোগ করা যায়। প্রতিদিন এক গ্লাস তাজা বিটরুটের রস পান করা, সালাদে কাঁচা বিটরুট রাখা কিংবা স্মুদি বানিয়ে খাওয়া উপকারী। হালকা সিদ্ধ করলেও এর পুষ্টিগুণ অনেকটাই বজায় থাকে। আয়রন শোষণ আরও বাড়াতে বিটরুটের সঙ্গে লেবু, কমলা বা আমলকির মতো ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হালকা অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে নিয়মিত বিটরুট খেলে শরীরে শক্তি ফিরে আসতে পারে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব। শরীরের ছোটখাটো উপসর্গকে অবহেলা না করে সময়মতো সচেতন হওয়াই সুস্থ থাকার প্রথম ধাপ। পুষ্টিকর ও প্রাকৃতিক খাবারকে দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্ব দিলে ধীরে ধীরে শরীর নিজেই ঘাটতি সামাল দিতে শেখে।
সিএ/এএ


