ফল মানেই পুষ্টি, তবে প্রতিটি ফলের উপকারিতা আলাদা। কেউ কলা বা আপেল পছন্দ করেন, কেউ আবার কমলালেবু কিংবা আঙুরে অভ্যস্ত। কিন্তু পেঁপে এমন একটি ফল, যাকে অনেকেই বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এড়িয়ে চলেন। অথচ চিকিৎসা ও পুষ্টিবিদদের মতে, পেঁপে আসলে পেটের জন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবেই কাজ করে।
পেঁপেতে রয়েছে ভিটামিন সি, শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, প্রচুর ফাইবার এবং প্যাপেইন নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম। এই প্যাপেইন প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে এবং হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। ফলে বদহজম, পেট ভারী লাগা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যায় পেঁপে বেশ উপকারী।
তবে পেঁপে কখন খাওয়া সবচেয়ে ভালো—দিনে না রাতে—তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই দ্বিধা রয়েছে। এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ না থাকলেও বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ মনে করেন, রাতে অল্প পরিমাণে পেঁপে খেলে হজমে সহায়তা করে। এটি তুলনামূলকভাবে হালকা খাবার হওয়ায় রাতের খাবারের পর বা হালকা স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।
তবে রাতে পেঁপে খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমাণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকদের মতে, রাতে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম পেঁপে খাওয়াই নিরাপদ। এর বেশি খেলে কিছু মানুষের ক্ষেত্রে পেট ফাঁপা, গ্যাস বা অস্বস্তির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের বদহজম, গ্যাস, খাদ্য সংবেদনশীলতা বা ল্যাটেক্স অ্যালার্জির সমস্যা নেই, তারাই রাতে পেঁপে খেলে বেশি উপকার পান।
পেঁপে যতটা স্বাস্থ্যকর, সঠিক সময় ও সঠিক পরিমাণে না খেলে ততটাই ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী, দীর্ঘদিনের হজমের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তি কিংবা যারা নিয়মিত কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করেন, তাদের ক্ষেত্রে পেঁপে উপকারী হওয়ার বদলে ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পেঁপেতে থাকা ভিটামিন সি শরীরে অক্সালেট তৈরি করতে পারে। এই অক্সালেট ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই যাদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা আছে, তাদের পেঁপে খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রেও পেঁপে খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন থাকে। চিকিৎসকদের মতে, মাঝারি পরিমাণে পেঁপে সাধারণত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নিরাপদ। পেঁপের গ্লাইসেমিক সূচক কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে দেয় না। পাশাপাশি এর ফাইবার রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তবে অতিরিক্ত খেলে অন্যান্য ফলের মতোই রক্তে শর্করার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেঁপে খাওয়ার পর যদি কারো পেটে অস্বস্তি, ব্যথা বা অন্য কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।
সিএ/এএ


