রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আ মামুনের হিজাব নিয়ে করা মন্তব্যকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তার শাস্তির দাবি জানান। পরে মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি দীর্ঘ পোস্টে ক্ষমা চান অধ্যাপক মামুন।
ফেসবুকে দেওয়া সেই পোস্টে তিনি লেখেন, “আমি এক এগারোর সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল করেছি, জেলও খেটেছি। ২০১৩ সাল থেকে নানা অন্যায় ও জুলুমের সমালোচনা করেছি—ক্যাম্পাসে এবং ক্যাম্পাসের বাইরে। জুলাই আন্দোলনের সময় আমি সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম এবং শিক্ষক হিসেবে আন্দোলনকারীদের আগলে রেখেছিলাম। শেখ হাসিনার পতনের মুহূর্তে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে দেশের বাস্তবতা আমাকে গভীরভাবে হতাশ করেছে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “এই হতাশার মুহূর্তে ঝোঁকের বশে আমি এমন একটি পোস্ট লিখেছিলাম, যা লেখা উচিত হয়নি। আমি বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গেই পোস্টটি সরিয়ে নিয়েছিলাম। আমার উদ্দেশ্য কাউকে তাচ্ছিল্য করা বা ধর্মীয় পোশাক নিয়ে উপহাস করা ছিল না। বরং আমার আগের পোস্টগুলোই প্রমাণ করে যে, আমি হিজাবসহ সব ধরনের পোশাকের স্বাধীনতাকে সমর্থন করি। কেউ যদি আমার লেখায় কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
তিনি আরও লেখেন, “আমি চাই না আমার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা শিক্ষার্থীরা অযথা বিব্রত হন কিংবা কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হোক। বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষাঙ্গন—এখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানই সবচেয়ে জরুরি। আমি আশা করি, এই বিভ্রান্তি দ্রুত কেটে যাবে এবং সবাই স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশে ফিরে আসবে।”
অধ্যাপক মামুনের এই ক্ষমা প্রার্থনার পরও মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)-এর প্রতিনিধিরা তার শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, একজন শিক্ষক হিসেবে তার এমন মন্তব্য নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। এর আগে সোমবার রাতেই শতাধিক শিক্ষার্থী তার মন্তব্যের প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভে অংশ নেয় এবং প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলে।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে আপাতত শান্ত পরিবেশ বজায় থাকলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া এখনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সিএ/এমআর


