বড় হচ্ছে প্রমোদতরির আকার, কত পড়ছে দাম?
আন্তর্জাতিক বাজারে প্রমোদতরি বা সুপারইয়ট নির্মাণে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বিলাসবহুল নৌযানগুলোর আকার ক্রমশ বড় হচ্ছে এবং তাদের দামও আকাশছোঁয়া পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। আধুনিক সাগরপথে যাত্রার এই ‘ভাসমান প্রাসাদগুলো’ এখন শুধু মালিকদের বিলাসিতা নয়, নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশ্ববাজারের এক বড় অংশ দখল করছে সুপারইয়ট, যার দৈর্ঘ্য সাধারণত ২৪ মিটার (৭৮ ফুট) বা তার বেশি। আন্তর্জাতিক নৌযান বিষয়ক বোট ইন্টারন্যাশনাল ম্যাগাজিনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট ১,০২৪টি প্রমোদতরি নির্মাণ বা অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। এই সংখ্যা ২০২৩ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,২০৩-এ, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি।
তবে ২০২৫ সালে প্রমোদতরির সংখ্যা সামান্য কমে ১,১৩৮-এ নামার আশঙ্কা থাকলেও, বড় এবং অত্যাধুনিক সুপারইয়টের নির্মাণ বেড়েই চলেছে। ২০২৫ সালের মধ্যে দৈর্ঘ্যে ৭৬ মিটার বা তার বেশি প্রমোদতরি তৈরি হয়েছে ৬১টি, যা পূর্বের বছরের তুলনায় বেশি।
দামের দিক থেকে ছোট আকারের নতুন প্রমোদতরির মূল্য শুরু হয় প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ ইউরো থেকে। বিপুল আকার ও সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন ১০৫ মিটার দীর্ঘ সুপারইয়টের দাম হতে পারে ২৯ কোটি ৫০ লাখ ইউরো পর্যন্ত।
বিশ্বে প্রমোদতরি নির্মাণের ক্ষেত্রে ইতালি শীর্ষে থেকে মোট উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে। এছাড়া তুরস্ক, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, তাইওয়ান, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০২৩ সালে শুধুমাত্র ইতালির প্রমোদতরি শিল্প থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৮৩০ কোটি ইউরো, যা ঐ খাতের জন্য নতুন রেকর্ড।
ক্রেতাদের মধ্যে মার্কিন নাগরিকরা সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণকারী। তবে তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া ও মেক্সিকোর ক্রেতাদের মধ্যেও চাহিদা বাড়ছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে রাশিয়ার ক্রেতাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
বিলাসিতার পাশাপাশি প্রমোদতরি পরিচালনায় দক্ষতা ও কর্মীদের সন্তুষ্টি বজায় রাখা জরুরি। প্রমোদতরি মালিকদের মতে, নৌযানের ক্রুদের স্থলভাগের তুলনায় দ্বিগুণ বেতন দিতে হয়, যা তাদের কর্মমুখী ও দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করে।
সার্বিকভাবে, প্রমোদতরি আজ বিলাসবহুল জীবনযাত্রার একটি শক্তিশালী প্রতীক হয়ে উঠেছে, যার আকার ও দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধনী ব্যক্তিরা এর মাধ্যমে নিজেদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাও নিশ্চিত করছেন।