ঝিনাইদহের প্রকৃতি এখন হেমন্তকালীন সৌন্দর্য আর শীতের আগমনের আভাসে ভাসছে। শরতের শুভ্রতা শেষ হয়ে আসছে, তার সঙ্গে হেমন্ত ঋতুর নান্দনিক বিদায়ের ছোঁয়ায় সকাল-বিকেল হালকা ঠান্ডা হাওয়া শীতের আগমনকে স্বাগত জানাচ্ছে। যদিও হেমন্তের শীত কনকনে নয়, তবু ভোরবেলা ও সন্ধ্যার হাওয়া যেন শীতের প্রস্তুতির বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে শহর থেকে গ্রামের কোণাকুণা পর্যন্ত।
এই সময় বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়েছে শীতের প্রস্তুতি। অগ্রহায়ণে নতুন ধান ওঠার আগে কৃষকের উঠান পরিষ্কার, ফসলের জমি প্রস্তুত এবং শীতের পোশাক, কাঁথা, কম্বল পরিষ্কার ও শুকানোর কাজ চলছে তৎপরভাবে। গ্রামীণ জীবনে এই ঋতুর সঙ্গে আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও চাহিদাও জড়িত। ভোরের কুয়াশা, ফসলের ঘ্রাণ এবং শিশিরের সঙ্গে গ্রামের ঘরে ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজ যেমন চলছে, তেমনই শীতের আগমনের জন্য মানসিক প্রস্তুতিও চলছেই।
হরিণাকুণ্ডুর চাঁদপুর গ্রামের গৃহবধূ চম্পা খাতুন বলেন, বর্ষাকাল শেষ হওয়ায় গ্রামে ঝোপঝাড় এবং কাদাপানির জায়গায় এখন শীতের টান এসেছে। তিনি বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখার কাজ করছেন এবং অগ্রহায়ণে নতুন ধান ওঠার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সদরের হলিধানী ইউনিয়নের নাটাবাড়িয়া গ্রামের গৃহবধূ অঞ্জলী খাতুন জানান, কার্তিক মাসের শুরু থেকেই লেপ-কাঁথা প্রস্তুত, পুরনো কাপড় ধোয়া এবং রোদে শুকানো সব কাজ একসাথে চলে। ফসল উঠার আগে মাঠ পরিষ্কার করাও জরুরি।
৬৫ বছর বয়সী কৃষক ফতেহ বিশ্বাস জানিয়েছেন, গ্রামীণ সংস্কৃতির অনেক প্রাচীন রীতি এখনো বজায় আছে। ছোটবেলায় হেমন্তকালে গান-বাজনা, মাটি লেপে বাড়ি সাজানো, বৈঠকখানা পরিপাটি করা চলত। যদিও এখন কিছু বদলে গেছে, লেপ-কাঁথা বানানো এবং নারীদের একসাথে গাতা করে কাজ করা এখনো চলে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন বলেন, এক সপ্তাহ আগেও প্রচণ্ড গরম আর বৃষ্টির কারণে মানুষ কষ্টে ছিল। এখন সকাল ও সন্ধ্যার হালকা শীতের আবহ, কৃষকরা মাঠে সবজি রোপণ শুরু করেছেন। হেমন্তকাল আসলে শীত নয়, তবে শীতের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়। এই সময়ে নতুন ফসল ঘরে তোলারও প্রস্তুতি চলছে।
জেলা শহরের পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, শহর ও গ্রামের জীবনযাত্রার পার্থক্য স্পষ্ট। বাংলা গ্রামীণ সংস্কৃতি ছয় ঋতুর মধ্যে জীবন্ত। পঞ্জিকা অনুযায়ী কার্তিক ও অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল, পৌষ ও মাঘ শীতকাল। দিনের গরম মধ্যম হলেও বাতাসে সারাদিন হালকা শীত অনুভূত হয়। কুয়াশা, শিশির, শাকসবজির ঘ্রাণ, সবুজ ধানক্ষেত মিলিয়ে প্রকৃতি রঙিন হয়ে ওঠে, যা শীতের আগমনের আভাস বহন করে।
সিএ/এমআর