সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর অংশবিশেষ বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলের ওপর শুনানি শুরু করেছে আপিল বিভাগ। বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ সংক্ষিপ্ত শুনানি নিয়ে আগামীকাল পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেছে।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর পৃথক দুটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনীর বেশ কয়েকটি ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ সংবিধানে ৫৪টি পরিবর্তন এনে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছিল।
হাইকোর্টের রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরানোর পথ খুললেও এ নিয়ে আইনি জটিলতা থাকতে পারে—এই যুক্তিতে রায়ের বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক আপিল করা হয়। সুজন সম্পাদকসহ চারজন, নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেন এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আপিল করা হয়। আজ এসব আপিল শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠে।
সুজন সম্পাদকসহ চারজনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। তিনি হাইকোর্টের রায় ও পঞ্চদশ সংশোধনীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করা হয় এবং সংবিধানে বেশ কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়। গত বছরের জুলাই অভ্যুত্থানের পর সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দুটি রিট হয়—একটি সুজন সম্পাদকসহ পাঁচজনের এবং অন্যটি নওগাঁর বাসিন্দা মো. মোফাজ্জল হোসেনের।
হাইকোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্তিসংক্রান্ত ২০ ও ২১ ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি সংবিধানে যুক্ত ৭ ক, ৭ খ এবং ৪৪ (২) অনুচ্ছেদও বাতিল হয়। গণভোটের বিধানসংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়। তবে পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাতিল করা হয়নি; বাকি ধারা নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার দায়িত্ব সংসদের ওপর রাখা হয়।
চলতি বছরের ৮ জুলাই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ চার ব্যক্তি সংশোধনী পুরো বাতিলের দাবিতে লিভ টু আপিল করেন। মোফাজ্জল হোসেন এবং জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও পৃথক লিভ টু আপিল করেন। গত ১৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ সব আবেদন মঞ্জুর করে।
আজ থেকে তিনটি আপিলের মূল শুনানি শুরু হয়েছে। এই মামলায় ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, বার কাউন্সিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মো. রুহুল কুদ্দুস এবং সেন্টার ফর ল গভর্ন্যান্স অ্যান্ড পলিসি।


