ফুসফুস ভালো রাখতে কিছু খাদ্য ও অভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে হেমন্ত এবং শীতের সময়ে দূষণ, ধুলো-ময়লা ও শুষ্ক আবহাওয়া ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হতে পারে। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা মেনে চললে শ্বাসনালী ও ফুসফুসকে সুস্থ রাখা সম্ভব। নিচে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হলোঃ
১. পর্যাপ্ত হাইড্রেশন বজায় রাখুন
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা ফুসফুসের জন্য খুব জরুরি। পানি শরীরের শ্লেষ্মা পাতলা রাখতে সাহায্য করে, ফলে শ্বাসনালীর মাধ্যমে ধুলো ও বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। শুধু পানি নয়, ভেষজ চা, মধু দিয়ে গরম পানি, লেবুর পানি ও গ্রিন টিও ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত গ্রিন টি খাওয়ার ফলে ফুসফুসের স্বাভাবিক কার্যকারিতা বজায় থাকে এবং প্রদাহ কমে।
২. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই ফুসফুসকে দূষণ ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। কমলা, কিউই, স্ট্রবেরি, বেরি, পালং শাক, ব্রোকলি, বাদাম ও সূর্যমুখী বীজ এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে ফুসফুসের শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং প্রদাহ কমে।
৩. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। মাছের মধ্যে স্যামন, ম্যাকেরেল, টুনা, তিসি এবং বাদাম ও আখরোটের মতো বাদামজাতীয় খাবার ওমেগা-৩ এর সমৃদ্ধ উৎস। এই ফ্যাটি অ্যাসিড ফুসফুসে প্রদাহ কমিয়ে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪. প্রদাহ-বিরোধী মসলা
হলুদ, আদা, রসুন, মৌরি ও কালো মরিচ ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এই মসলাগুলো শ্লেষ্মা ভেঙে ফুসফুসের পথ পরিষ্কার রাখে এবং রক্তসঞ্চালন উন্নত করে। বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত আদা, রসুন ও হলুদ খাওয়ার পরামর্শ দেন। সেদিক থেকে এগুলো ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধেও কার্যকর।
৫. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন সবজি, ফল, দানা, শিম এবং ওটমিল শরীরের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে। ফাইবার ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং প্রদাহ কমাতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন পর্যাপ্ত ফাইবার গ্রহণ করলে ফুসফুসের ফাংশন উন্নত হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাস সহজ হয়।
৬. প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার
কিছু খাবার ফুসফুসের প্রদাহ কমাতে বিশেষভাবে কার্যকর। যেমন পেঁপে, আনারস, টমেটো, শসা, আলুভুরি এবং লাল মটর। এগুলোতে থাকা ভিটামিন ও ফাইটোকেমিক্যাল ফুসফুসের কোষকে সুরক্ষা দেয়।
৭. স্বাস্থ্যকর জীবনধারা
খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি ধূমপান এড়ানো, ধুলো-ময়লা কমানোর চেষ্টা করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা এবং পর্যাপ্ত ঘুম ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হালকা কার্ডিও ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
সারসংক্ষেপে, হাইড্রেশন বজায় রাখা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, প্রদাহ-বিরোধী মসলা এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য নিয়মিত খেলে ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব। পাশাপাশি ধূমপান এড়ানো ও নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শ্বাসযন্ত্রকে শক্তিশালী রাখে।
সিএ/এমআর