মঙ্গলবার লিগ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নাটকীয় এক ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে ক্রিস্টাল প্যালেসকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে আর্সেনাল। এমিরেটস স্টেডিয়ামে নির্ধারিত সময়ের ম্যাচ ১-১ গোলে শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে ৮-৭ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে উত্তর লন্ডনের ক্লাবটি। গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগার একটি গুরুত্বপূর্ণ সেভই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।
ম্যাচের শেষ দিকে আত্মঘাতী গোলের শিকার হন ক্রিস্টাল প্যালেস ডিফেন্ডার ম্যাক্সেন্স ল্যাক্রোয়িক্স। ৮০তম মিনিটে বুকায়ো সাকার কর্নার থেকে তৈরি হওয়া গোলমুখের বিশৃঙ্খলায় সালিবার শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজের জালেই বল পাঠান তিনি। তবে যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে অ্যাডাম ওয়ার্টনের ফ্রি-কিক থেকে জেফারসন লের্মার হেডের পর কাছ থেকে গোল করে প্যালেসকে সমতায় ফেরান মার্ক গুয়েহি।
ফলাফল নির্ধারণে ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে। প্রথম সাতটি করে শটে দুই দলই গোল করে। আর্সেনালের অষ্টম শটে উইলিয়াম সালিবা সফল হলে চাপ পড়ে প্যালেসের ওপর। কেপা ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ল্যাক্রোয়িক্সের শট ঠেকিয়ে দিলে ৮-৭ ব্যবধানে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয় আর্সেনালের।
এই ম্যাচে কেপার পারফরম্যান্স ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ২০১৯ সালে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে চেলসির লিগ কাপ ফাইনালে পেনাল্টি শুটআউটের আগে বদলি হতে অস্বীকার করে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০২২ সালে লিভারপুলের বিপক্ষে আরেক লিগ কাপ ফাইনালে নিজেও একটি পেনাল্টি মিস করেছিলেন। সেই স্মৃতির বিপরীতে এই সেভ কেপার জন্য হয়ে ওঠে এক ধরনের মুক্তির মুহূর্ত।
সেমিফাইনালে দুই লেগে লন্ডনের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসির মুখোমুখি হবে আর্সেনাল। অন্য সেমিফাইনালে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নিউক্যাসলের বিপক্ষে খেলবে ম্যানচেস্টার সিটি।
ম্যাচ শেষে আর্সেনাল কোচ মিকেল আর্তেতা বলেন, আমরা অনেক সুযোগ তৈরি করেছি এবং আরও গোল করা উচিত ছিল। যখন ম্যাচ শেষ করতে পারেন না, তখন গোল খাওয়ার ঝুঁকি থাকেই। আমাদের কয়েকজন খেলোয়াড় ব্যক্তিগতভাবে দারুণ খেলেছে। পেনাল্টিতে খেলোয়াড়রা খুব শান্ত ছিল এবং শেষ পর্যন্ত কেপা একটি সেভ করেছে। আমরা যেখানে থাকতে চাই, সেখানেই আছি।
টানা দ্বিতীয় মৌসুমে লিগ কাপের সেমিফাইনালে উঠল আর্সেনাল। ২০২০ সালে এফএ কাপ জয়ের পর এটি হতে পারে তাদের প্রথম শিরোপা। ক্লাবটির লিগ কাপ শিরোপা মাত্র দু’টি, সর্বশেষ ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে। বর্তমান স্কোয়াডের কেউ তখন জন্মায়ওনি।
এই ম্যাচে শনিবার এভারটনের বিপক্ষে জয়ী একাদশ থেকে আটটি পরিবর্তন আনেন আর্তেতা। উইলিয়াম সালিবা, মিকেল মেরিনো, এবেরেচি এজে, গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলি ও গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে নিয়ে শক্তিশালী দল নামান তিনি। জানুয়ারিতে বাঁ হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার পর ৩৪৫ দিন পর শুরুর একাদশে ফেরেন জেসুস।
ম্যাচের শুরু থেকেই আর্সেনাল আক্রমণাত্মক ছিল। ননি মাদুয়েকে দু’বার গোলের সুযোগ পেলেও ক্রিস্টাল প্যালেস গোলরক্ষক ওয়াল্টার বেনিতেজ তা রুখে দেন। জেসুসের হেড এবং মাদুয়েকের আরও একটি জোরালো শট ঠেকিয়ে পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স উপহার দেন বেনিতেজ।
দ্বিতীয়ার্ধে বুকায়ো সাকা ও মার্টিন ওডেগার্ডকে নামান আর্তেতা। ওডেগার্ড নামার পরপরই তার ক্রসে জেসুসের হেড অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত সেট-পিস থেকেই আর্সেনাল লিড নেয়, তবে প্যালেসও সেট-পিস থেকেই ম্যাচে ফেরে।
বৃহস্পতিবার বড়দিন উদযাপনের পর আবার শিরোপা লড়াইয়ে মনোযোগ দেবে আর্সেনাল। ২০২৫ সালের শেষ দিকে প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে ব্রাইটন ও তৃতীয় স্থানে থাকা অ্যাস্টন ভিলার মুখোমুখি হবে দলটি। ২০০৪ সালের পর প্রথমবারের মতো লিগ শিরোপা জয়ের লক্ষ্য থাকলেও মার্চে লিগ কাপ জিততে পারলে সেটি হবে বড় অনুপ্রেরণা।
সিএ/বিই


