ফরজ গোসল করা বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে সহবাস, স্বপ্নদোষ, ইচ্ছাকৃত বীর্যপাত এবং নারীদের হায়েজ বা নেফাসের পর। শরীর অপবিত্র হলে যত দ্রুত সম্ভব গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা উচিত। কারণ, আল্লাহ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন মানুষদের ভালোবাসেন। কোরআনে বলা হয়েছে, “যারা উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।” (সুরা তাওবা : ১০৮)
গোসলের সঠিক পদ্ধতি:
- প্রস্রাব-পায়খানা সেরে নেওয়া: গোসলের আগে প্রস্রাব ও পায়খানা সেরে নিলে বীর্য বা নাপাক জিনিস সম্পূর্ণরূপে ধুয়ে ফেলা সহজ হয়।
- হাত ধোয়া: বিসমিল্লাহ বলে দুই হাত কবজি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা।
- অপবিত্র অংশ পরিষ্কার করা: ডান হাতে পানি নিয়ে বাঁ হাত দিয়ে শরীরের যেসব অংশে বীর্য বা নাপাক লেগে আছে তা ধুয়ে নেবে। এরপর বাঁ হাত ধুয়ে ফেলবে।
- অজু করা: গোসলের আগে অজু করবে। এ ক্ষেত্রে কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া সুন্নত হলেও ফরজ গোসলের জন্য কুলি ও নাকে পানি পৌঁছানো বাধ্যতামূলক নয়। তবে পা ধুতে হবে না।
- পুরো শরীর ধোয়া: ডান দিক থেকে তিনবার, তারপর বাঁ দিক থেকে তিনবার পানি ঢেলে গোসল করবে। নাভি, বগল ও অন্যান্য জায়গায় পানি পৌঁছানো জরুরি। গোসল শেষে সামান্য সরে গিয়ে দুই পা তিনবার ধুবে।
গোসলের শিষ্টাচার:
- উঁচু স্থানে বসে গোসল করা উচিত, যাতে পানি গড়িয়ে যায় ও অপচয় না হয়।
- লোকসমাগমের স্থানে গোসল না করে পবিত্র স্থানে গোসল করতে হবে।
- ডান দিক থেকে গোসল শুরু করা।
- শরীরের চুল ও নেইলপলিশ, সুপারগ্লু ইত্যাদি যা পানি পৌঁছাতে বাধা দেয় তা খুলে পানি পৌঁছানো জরুরি।
- পুরুষের দাড়ি ও মাথার চুল গোড়াসহ ভিজতে হবে। নারীর চুল বাঁধা থাকলে খোলা না থাকলেও শুধু গোড়ায় পানি পৌঁছানো যথেষ্ট, খোলা থাকলে পুরুষের মতো সম্পূর্ণ ধৌত করা।
- নারীদের কান ও নাকফুলে পানি পৌঁছানো জরুরি।
- কানের ভেতর ও নাভি পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- দাঁতের ক্যাপ বা পিনের কারণে যদি পানি পৌঁছানো যায় না, তবে তা খোলা জরুরি নয়।
ফরজ গোসলে নিষিদ্ধ কাজ:
- নামাজ আদায়: বড় নাপাকি অবস্থায় নামাজ আদায় করা যাবে না। (সুরা নিসা : ৪৩)
- কোরআন স্পর্শ: অপবিত্র শরীরে কোরআন স্পর্শ করা যাবে না। (সুরা ওয়াকিয়া : ৭৯)
- কোরআন তিলাওয়াত: বড় নাপাকি অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াত করা যাবে না।
- মসজিদে অবস্থান: হায়েজ বা ফরজ গোসলের অবস্থায় মসজিদে যাওয়া বৈধ নয়।
- কাবা ঘর তাওয়াফ: ফরজ গোসলের অবস্থায় কাবা ঘরে তাওয়াফ করা যাবে না।
সঠিকভাবে ফরজ গোসল করার মাধ্যমে ব্যক্তি পবিত্র হয়ে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত বিশুদ্ধভাবে পালন করতে সক্ষম হয়।
সিএ/এমআর