ডিম প্রোটিনে সমৃদ্ধ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর এবং দৈনন্দিন খাবারের সঙ্গে সহজে মানিয়ে যায়। সকালের নাস্তা থেকে রাতের খাবার পর্যন্ত ডিমের ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, যদি এক মাস ধরে প্রতিদিন ডিম খাওয়া হয়, তাহলে শরীরে কী কী পরিবর্তন দেখা দেয়। অতীতে কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণে ডিমকে নিয়ে সতর্কতা ছিল, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যকর।
১. পেশী বৃদ্ধি ও শক্তি বৃদ্ধি
ডিম একটি পূর্ণাঙ্গ প্রোটিনের উৎস। এতে রয়েছে পেশী মেরামত ও বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি অপরিহার্য অ্যামাইনো অ্যাসিড। পোল্ট্রি সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ডিম খেলে পেশীর ভর বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে ব্যায়ামের সঙ্গে মিলিয়ে খেলে আরও বেশি কার্যকর। ২০২১ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডিমের প্রোটিন সহজে হজমযোগ্য এবং ব্যায়ামের পর দ্রুত শক্তি ফিরিয়ে দেয়।
২. হার্ট স্বাস্থ্য রক্ষা
ডিমের কোলেস্টেরল নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত পরিমিত ডিম খেলে হার্টের জন্য উপকারী। ২০২৩ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, ডিম খেলে এইচডিএল (ভালো কোলেস্টেরল) বৃদ্ধি পায় এবং এলডিএল ভারসাম্য বজায় থাকে। ডিমে থাকা কোলাইন এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক থেকে দুটি ডিম দৈনিক খাওয়া সাধারণ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য নিরাপদ।
৩. মস্তিষ্ক ও চোখের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
ডিম কোলাইনে সমৃদ্ধ। কোলাইন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, স্মৃতিশক্তি ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, কোলাইন নিউরোট্রান্সমিটার তৈরিতে সহায়ক, যা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। এছাড়াও ডিমের কুসুমে থাকা লুটেইন ও জেক্সানথিন চোখকে নীল আলো এবং বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি হ্রাস থেকে রক্ষা করে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য
ডিমে প্রোটিন বেশি থাকায় এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য তৃপ্তি দেয়। যারা ওজন কমাতে বা বজায় রাখতে চান, তাদের জন্য ডিম উপকারী। ২০০৯ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালের নাস্তায় ডিম খান তারা সারা দিনে কম ক্যালোরি গ্রহণ করেন। ডিমের প্রোটিন শরীরের বিপাক বাড়ায় এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া কমায়।
৫. ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য
ডিমে বায়োটিন, ভিটামিন ডি এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড থাকে, যা ত্বক, চুল এবং নখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ২০১৭ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, বায়োটিন চুলকে শক্তিশালী করে এবং ভাঙা কমায়। প্রোটিন কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, যা ত্বককে মসৃণ ও নমনীয় রাখে। নিয়মিত ডিম খেলে চুল ঘন, নখ শক্ত এবং ত্বক দীপ্তিময় হয়।
৬. হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি
ডিমে থাকা ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত রাখে। নিয়মিত ডিম খেলে হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে এবং অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি কমে।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
ডিমে থাকা ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এক মাস ধরে নিয়মিত ডিম খেলে শরীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হয় এবং সাধারণ সর্দি, জ্বর কমে।
সিএ/এমআর


