বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রেমের স্মৃতিস্তম্ভ তাজমহল নিয়ে আবারও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মুঘল সম্রাট শাহজাহান ও মমতাজের অনন্ত প্রেমের প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত এই স্থাপনাকে নতুনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলিউডের সিনেমা ‘দ্য তাজ স্টোরি’। ভারতীয় পরিচালক তুষার গোয়েল পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে তাজমহলের সরকারিভাবে স্বীকৃত ইতিহাসকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
সিনেমার একটি দৃশ্যে দাবি করা হয়, ১৭শ শতকের তাজমহল আদতে কোনো মুসলিম সমাধি ছিল না; বরং এটি ছিল ‘একটি হিন্দু প্রাসাদ’, যা পরে মুঘলরা দখল করে নিত। বহু বছর ধরে হিন্দু উগ্রবাদীরা ‘তেজো মহালয়া’ নামে একটি কল্পিত হিন্দু মন্দিরের গল্প প্রচার করে আসলেও ইতিহাসবিদরা বরাবরই এসব দাবিকে ভিত্তিহীন বলে খণ্ডন করেছেন। এবার সেই মিথ্যাকে চলচ্চিত্রে তুলে ধরায় নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
সিনেমায় তাজমহলের ট্যুর গাইড বিশু দাস চরিত্রে অভিনয় করেছেন খ্যাতিমান অভিনেতা পরেশ রাওয়াল। এক দৃশ্যে তাকে বলতে দেখা যায়, “আমার সারা জীবনের বিশ্বাস ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। তাজমহলের ডিএনএ টেস্ট করা যায় না? আমরা কি তবে মিথ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছি?”—যা চলচ্চিত্রের বিতর্কিত বক্তব্যকে আরও উসকে দিয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে, পরেশ রাওয়াল আগে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সংসদ সদস্য ছিলেন।
সমালোচকদের অভিযোগ, প্রায় ২০ কোটি মুসলিমকে হেয় করতে এবং সংখ্যালঘুদের অবদান মুছে দিতে এ ধরনের চলচ্চিত্র তৈরি করা হচ্ছে। তাদের মতে, বলিউডের একটি অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাস পুনর্কল্পনা করে হিন্দু জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’, ‘ছাভা’, ‘পদ্মাবত’—এসব সিনেমার সঙ্গে এর সাদৃশ্যও তুলে ধরছেন তারা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ছবিটিকে “ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কোলাজ” বলে আখ্যা দিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, এটি কোনো গবেষণাধর্মী কাজ নয়; বরং মনগড়া তথ্য দিয়ে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে—
“দ্য তাজ স্টোরি হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রচারণার একটি বৃহত্তর বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়, যা বলিউডের জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব চলচ্চিত্র মধ্যযুগীয় মুসলিম শাসকদের রক্তপিপাসু হিসেবে দেখায় এবং ভারতীয়-মুসলিম স্থাপত্য, সংগীত ও সংস্কৃতিকে নিপীড়নের গল্পে রূপান্তরিত করছে।”
পরিচালক তুষার গোয়েল অবশ্য দাবি করেছেন, সিনেমাটি কোনো রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে নির্মিত নয়। তবে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের দীর্ঘদিনের গবেষণার পরিপন্থী কাহিনি হওয়ায় চলচ্চিত্রটি সাধারণ দর্শক, শিক্ষার্থী ও গবেষকদের কাছেও খুব বেশি সমর্থন পায়নি।
সিএ/এএ


