চলতি বছর বিশ্ববাজারে ডলারের বিনিময় হার ক্রমেই কমছে। অন্যদিকে, সোনার দাম বাড়ছে, যা সাধারণত ডলারের সঙ্গে বিপরীতমুখী সম্পর্ক তৈরি করে। ডলারের মান নির্ণয়ের জন্য প্রণীত ডলার ইনডেক্স আড়াই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। বর্তমানে এই সূচকের মান দাঁড়িয়েছে ৯৭ দশমিক ৭৬৭। চলতি বছরের এই পতন ৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০০৩ সালের পর সর্বোচ্চ ডলারের দরপতন হিসেবে দেখা দিতে পারে।
ডলারের মান কমার মূল কারণ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার কমানো। চলতি বছর ফেড একাধিকবার নীতি সুদহার কমিয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা আশা করছেন, আগামী বছরও ফেড সুদহার কমাতে পারে। তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশাতীত প্রবৃদ্ধি থাকলেও বিনিয়োগকারীরা ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
বহুজাতিক এইচএসবিসি ব্যাংকের বিশ্লেষকরা মনে করেন, ডিসেম্বর মাসে ডলারের দুর্বলতার কারণ শুধুই নীতিগত নয়; ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ এবং বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্ত অবস্থান ডলারের মান কমাচ্ছে। ইউরোর মান ১৪ শতাংশ বেড়ে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। বর্তমানে এক ইউরোর বিনিময়ে ১ দশমিক ১৮০৬ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। ইউরোর পাশাপাশি পাউন্ড, অস্ট্রেলীয় ও নিউজিল্যান্ড ডলারের মানও ঊর্ধ্বমুখী, তবে জাপানি ইয়েনের মান কমছে।
বাংলাদেশের বাজারে ডলারের দাম কয়েক মাস ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি ডলারের বিপরীতে বর্তমানে ১২২ টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
ফেডের নীতি সুদহার কমলে ডলারের বিনিয়োগ আকর্ষণ কমে যায়, যা ডলারের দুর্বলতার প্রধান কারণ। সুদহার কম মানে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড ও আর্থিক সম্পদে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্তি কমে যায়। বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফার আশায় অন্য দেশের মুদ্রা ও বাজারে পুঁজি বিনিয়োগ করে, ফলে ডলারের চাহিদা কমে যায়। সুদ কমানোর কারণে অর্থনীতিতে তারল্য বৃদ্ধি পায় এবং ডলারের সরবরাহ বাড়ার প্রত্যাশা তৈরি হয়। অন্যদিকে, যদি অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ অপরিবর্তিত রাখে বা বাড়ায়, তবে ডলারের মান ক্ষয় পায়।
ডলারে বিনিয়োগ কমে গেলে বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। চলতি বছরে সোনার দাম ৬৮ শতাংশ বেড়েছে, যা ডলারের দুর্বলতার প্রভাবের প্রতিফলন।
বিশ্ববাজারে ডলারের দুর্বলতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সুবিধা বয়ে আনে। এই অবস্থায় তাদের ডলারে ঋণের বোঝা হালকা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমে, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেওয়া সহজ হয়। এছাড়া বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক বেশি মুনাফার আশায় এসব দেশের বাজারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হন।
সিএ/জেএইচ


