মাথায় গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে এখনই আশার গল্প শোনানোর মতো কোনো পরিস্থিতি নেই বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘণ্টা হাদির জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময়।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাদির শারীরিক অবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
ডা. সায়েদুর রহমান জানান, হাদির মাথায় গুলিটি বাম কানের ঠিক ওপর দিয়ে ঢুকে ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। এই গতিপথে মস্তিষ্কের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্রেন স্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ম্যাসিভ ব্রেন ইনজুরি’। ব্রেন স্টেম মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাসসহ জীবনরক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে।
তিনি বলেন, ‘হাদি বর্তমানে খুবই ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আছেন। আগামী ৭২ ঘণ্টা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এই অবস্থায় কোনো ধরনের নতুন ইন্টারভেনশন করা সম্ভব নয়। রোগীকে কেবল লাইফ সাপোর্টে রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’
বিশেষ সহকারী আরও জানান, হাদিকে বর্তমানে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকেরা এখনো আশার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। তবে সামান্য আশার জায়গা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, অপারেশনের সময় হাদির শরীরে নিজের শ্বাস নেওয়ার কিছু প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গিয়েছিল এবং এখনো তার শরীরে ‘সাইন অব লাইফ’ রয়েছে।
তবে পরিস্থিতি যে অত্যন্ত জটিল, সেটিও স্পষ্ট করে জানান ডা. সায়েদুর রহমান। তাঁর ভাষায়, ‘অস্ত্রোপচারের আগেই হাদি একবার শকে চলে গিয়েছিলেন। পরে অ্যাম্বুল্যান্সে করে স্থানান্তরের সময় নাক ও গলা দিয়ে প্রবল রক্তক্ষরণ শুরু হয়। যদিও আপাতত সেটি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।’
এর আগে শুক্রবার রাত ৮টার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাদিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিক্যালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাহিদ রায়হান সাংবাদিকদের জানান, ‘হাদির দুবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। ঘটনার পর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এই রোগীর বিষয়ে আমরা আশার কোনো কথাই বলব না। তিনি সর্বোচ্চ খারাপ অবস্থায় আছেন, তবে এখনো বেঁচে আছেন। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।’
এদিকে ঘটনার তদন্ত প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
সূত্র: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ
সিএ/এএ


