গত দেড় বছরে অন্তর্বর্তী সরকার যে সাফল্য অর্জন করেছে, তা এত স্বল্প সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোনো সরকার অর্জন করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক বিশদ পোস্টে তিনি সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও অর্জনের উল্লেখ করে এই মূল্যায়ন তুলে ধরেন।
তার দাবি অনুযায়ী, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসন হিসেবে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে এবং নির্ধারিত অধিকাংশ লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। যদিও নামের দিক থেকে এটি একটি অস্থায়ী সরকার, কিন্তু বাস্তবে রাষ্ট্র পরিচালনায় তারা যে সক্ষমতা দেখিয়েছে, তা অনেকের মূল্যায়নের বাইরে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শফিকুল আলম তার পোস্টে লেখেন, অনেকেই অন্তর্বর্তী সরকারকে দুর্বল কাঠামোর প্রশাসন হিসেবে বিবেচনা করলেও বাস্তবে দেশের জন্য তারা গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে। তিনি জানান, শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি, বিপুল আইন পাস এবং প্রশাসনের দুর্বলতার অভিযোগ এনে কেউ কেউ এই সরকারকে ‘ভীতু’ বা ‘কিছু না করা সরকার’ বললেও সময় প্রমাণ করেছে তাদের অর্জন ভিন্ন মাত্রার।
তিনি দাবি করেন, গত ৫০০ দিনে ১ হাজার ৭০০-র বেশি বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ, আইন সংস্কার, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমিয়ে স্থিতিশীলতা ফেরানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কারও দেশের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে বলে মনে করেন প্রেস সচিব।
তার পোস্টে তুলে ধরা অন্তর্বর্তী সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলো হলো—
শান্তি ও স্থিতিশীলতা
বিপ্লব-পরবর্তী প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বন্ধ হয়ে দেশে শান্তি ফিরে এসেছে এবং রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা কমেছে।
বৈদেশিক বাণিজ্য ও কূটনৈতিক অগ্রগতি
কোনো লবিং ফার্ম নিয়োগ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কচুক্তিতে অগ্রগতি হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে নতুন অবস্থান তৈরি হয়েছে।
রেকর্ড আইন প্রণয়ন
১৫ মাসে রেকর্ড সংখ্যক আইন পাস হয়েছে। শ্রম আইন সংস্কার, জবাবদিহিতা জোরদার করার বিধান ও প্রশাসনিক সংশোধন এতে গুরুত্ব পেয়েছে।
বিনিয়োগ বৃদ্ধি
লালদিয়া টার্মিনালে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের বৃহৎ বিনিয়োগের চুক্তি দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি আনবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার
ব্যাংক খাতে অনিয়ম কমেছে, টাকার মান স্থিতিশীল হয়েছে এবং খাদ্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশে নেমেছে বলে দাবি তার।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
সুপ্রিম কোর্টের নেতৃত্বে নিম্ন আদালতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কমেছে এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতের পথ সুগম হয়েছে।
গুম ও সহিংসতার অবসান
জোরপূর্বক গুম কমেছে এবং বিরোধীদের দমনমূলক রাজনীতি থেকে সরে আসা হয়েছে বলে দাবি প্রেস সচিবের।
মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার পুনরুদ্ধার হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তার মতে, এসব অর্জনই প্রমাণ করে—অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটি নতুন রাজনৈতিক ধারায় উপনীত করেছে এবং সামনের দিনগুলোতে তা দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও গতিশীল করবে।
সিএ/এমআরএফ


