আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জোট হলেও প্রতিটি প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুমোদনের পর এ বিধান কার্যকর হচ্ছে। পাশাপাশি কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকছে না। ভোটাররা সে ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট দিতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়। বৈঠক শেষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান।
নতুন আরপিও অনুযায়ী, জোট গঠিত হলেও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নিজস্ব প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেবেন। এর ফলে বড় দলের প্রতীকে ছোট দলগুলোর প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে না।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানান, সংশোধিত আরপিওতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে তারা ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। একই সঙ্গে বিতর্কিত ইভিএম পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে।
নতুন বিধান অনুযায়ী, পলাতক আসামিরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এছাড়া প্রার্থীদের এফিডেভিটে দেশি-বিদেশি আয়ের উৎস, সম্পত্তি ও সম্পদের বিবরণ অনলাইনে প্রকাশ করতে হবে। প্রার্থীর জামানত ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে।
আরপিওতে যুক্ত হয়েছে না ভোটের বিধান। অর্থাৎ কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলেও ভোটাররা চাইলে না ভোট দিতে পারবেন। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ আর থাকছে না। ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি রোধে এই বিধান রাখা হয়েছে।
নতুন বিধানে পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। এবার প্রবাসী বাংলাদেশিসহ নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি অনলাইনে নিবন্ধনের পর ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন। সাংবাদিকদের ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকার সুযোগও রাখা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের অনুদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দিতে হবে এবং অনুদানদাতাকে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে হবে। পাশাপাশি অনিয়ম বা সহিংসতা ঘটলে নির্বাচন কমিশন এখন পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা রাখবে।
সরকার আগামী নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে বডিক্যাম, সিসিটিভি ও ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনাও করছে।
এ ছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫, দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর অধ্যাদেশ ২০২৫-এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সংশোধিত শ্রম আইন সম্পর্কে আইন উপদেষ্টা বলেন, এতে গৃহকর্মী ও নাবিকদের শ্রমিকের সংজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং নারী-পুরুষের বেতন বৈষম্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গঠন সহজ করা হয়েছে এবং দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পুনর্বাসন তহবিলের বিধান আনা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলাবিষয়ক ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে দেওয়া হবে, পাশাপাশি নিজস্ব বাজেট ব্যবস্থাও থাকবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।
সিএ/এমআর


