রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় রবিবার (২৮ ডিসেম্বর) দিন দিন তীব্র শীতের প্রভাবে জনজীবন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী, খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, শীতের এই প্রকোপ আগামী কয়েকদিনও অব্যাহত থাকতে পারে।
রংপুর অঞ্চলে রবিবার সকাল ১০টার দিকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এবং বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ায় শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১৩ দশমিক ৩, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৩ দশমিক ৪, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৩, রংপুরে ১৩, ডিমলায় ১২, দিনাজপুরে ১৩, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১১ দশমিক ৩, লালমনিরহাটে ১৩ দশমিক ৫ এবং গাইবান্ধায় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তীব্র শীতের কারণে দিনমজুর, কৃষিশ্রমিক, রিকশা ও অটোরিকশাচালকরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঘন কুয়াশার কারণে সকালবেলা কাজে বের হওয়া কঠিন হয়ে গেছে। চরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলে আলু ও শাকসবজির খেতে কাজ করাও দুষ্কর হয়ে উঠেছে। অনেকেই বেলা বাড়ার পর বিশেষ করে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টার মধ্যে কাজ করছেন।
রংপুর নগরীতে অটোরিকশাচালক দুলাল মিয়া বলেন, ‘গত তিন-চার দিন ধরে তীব্র শীতে যাত্রীই নেই। রাতে কুয়াশা এমন হয়, যেন বৃষ্টি পড়ছে। আয় কমে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে।’ কাচারী বাজার কোর্ট এলাকার পান দোকানদার মাহাবুব ইসলাম জানান, শীত ও আদালতের কাজ কম থাকায় শহরে লোকসমাগম কমেছে, ফলে বেচাকেনাও মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
শীতজনিত রোগেও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। সর্দি, হাঁচি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে শত শত মানুষ চিকিৎসা নিতে আসছেন।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তীব্র শীত ও বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলে শীতের অনুভূতি অনেক বেশি। সাময়িকভাবে আবহাওয়া কিছুটা উন্নত হলেও সামনে আবারও অবনতি হতে পারে।’
রমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘শীতের তীব্রতায় শিশু ও বয়স্কদের শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রোগীর চাপ সামাল দিতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগও চলছে। রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান জানান, জেলায় ইতিমধ্যে ২০ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। শীতের প্রকোপ বাড়ায় এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠনগুলোরও শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।’
সিএ/এএ


