বয়স বাড়া মানেই শুধু চুল পাকা বা চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ভেতর ও বাইরে ধীরে ধীরে নানা পরিবর্তন শুরু হয়। তবে শরীরের সব অঙ্গে একসঙ্গে বয়সের ছাপ পড়ে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু অঙ্গ ও অংশ রয়েছে যেগুলো সবার আগে বয়সের বার্তা দেয়। এসব পরিবর্তন আগেভাগে বুঝতে পারলে শরীর ও স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও সহজ হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বয়সের প্রথম প্রভাব সবচেয়ে আগে দেখা যায় মুখ ও চোখের চারপাশের ত্বকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের ভেতরের কোলাজেন ও ইলাস্টিন কমতে থাকে। ফলে ত্বক আগের মতো টানটান থাকে না। চোখের নিচে বলিরেখা, চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া, মুখে ক্লান্ত ও নিষ্প্রভ ভাব—এই লক্ষণগুলো সাধারণত সবার আগে চোখে পড়ে। রোদে বেশি বের হওয়া বা নিয়মিত ত্বকের যত্ন না নিলে এই পরিবর্তন আরও দ্রুত দেখা দেয়।
এরপর বয়সের ছাপ পড়ে ঘাড় ও চোয়ালের নিচের অংশে। অনেকেই মুখের যত্ন নিলেও ঘাড়ের দিকে তেমন নজর দেন না। ফলে ঘাড়ের ত্বক ধীরে ধীরে ঢিলে হয়ে যায়, ভাঁজ পড়ে এবং অনেকের ক্ষেত্রে ‘টার্কি নেক’-এর মতো দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখা দেয়। ঘাড়ের ত্বক তুলনামূলকভাবে বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় এখানে বয়সের ছাপ দ্রুত স্পষ্ট হয়।
তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হাত। হাত প্রায়ই বয়সের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে। সারাদিন কাজ করা, বারবার হাত ধোয়া, রোদে বের হওয়া এবং ত্বকের শুষ্কতার কারণে হাতের চামড়া পাতলা হয়ে যায়। এর ফলে হাতের শিরা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কালো দাগ ও বলিরেখা দেখা দেয়। অনেক সময় মুখে বয়সের ছাপ কম থাকলেও হাত দেখে প্রকৃত বয়স বোঝা যায়।
এরপর পরিবর্তন শুরু হয় মেরুদণ্ড ও দেহভঙ্গিতে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝখানের ডিস্কে পানির পরিমাণ কমে যায়। এর প্রভাবে ধীরে ধীরে উচ্চতা সামান্য কমে যেতে পারে এবং পিঠ সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা দেখা দেয়। অনেকেই বলেন, আগের মতো সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা বসতে কষ্ট হয়—এর পেছনে মূলত এই শারীরিক পরিবর্তনই দায়ী।
সবশেষে বয়সের প্রভাব পড়ে জয়েন্ট, লিগামেন্ট ও টেন্ডনে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলোর নমনীয়তা কমে যায়। ফলে হাঁটু ভাঁজ করতে, বসে উঠে দাঁড়াতে বা হাত তুলতে আগের চেয়ে বেশি কষ্ট অনুভূত হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে শরীর ভারী লাগা বা জড়তা অনুভব করাও বয়স বাড়ার সাধারণ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব পরিবর্তন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। তবে নিয়মিত হাঁটা, হালকা ব্যায়াম, স্ট্রেচিং, সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও দাঁড়ানো এবং ত্বকের নিয়মিত যত্ন নিলে বয়সের এই প্রভাব অনেকটাই ধীরে আনা সম্ভব। সচেতন জীবনযাপন বজায় রাখতে পারলে বয়স বাড়লেও শরীরকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখা যায়।
সিএ/এএ


