জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা-১৭ আসনের উদ্যোগে শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) ভাষানটেক এলাকায় আয়োজিত যুব-ছাত্র ও নাগরিক সমাবেশে ব্যবহৃত মঞ্চের লাল-সবুজ রঙ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মঞ্চের সিঁড়ি ও কার্পেট লাল-সবুজ রঙে সাজানো হয়েছে, যা অনেকেই স্বাধীনতার রক্তে রঞ্জিত জাতীয় পতাকার অবমাননা হিসেবে দেখছেন। সমালোচকদের দাবি, এমন ডিজাইন দেশের মর্যাদা ও শহীদদের ত্যাগকে হেয় করার প্রচেষ্টা।
দেশের পতাকা জাতীয় অহংকার ও স্বাধীনতার প্রতীক। স্বাধীনতার সংগ্রামে লাখো মানুষের জীবন ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত এই পতাকাকে অবমাননা করা যায় না। তাই সমালোচকরা মনে করছেন, লাল-সবুজের মঞ্চ ডিজাইনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জাতীয় প্রতীককে হেয় করার চেষ্টা। বিশেষ করে সিঁড়িতে ব্যবহৃত সবুজ রঙের ওপর লাল গালিচা এমনভাবে রাখা হয়েছে, যা স্বাধীনতার ইতিহাস এবং শহীদদের আত্মত্যাগকে অগ্রাহ্য করছে। অনেকের মতে, এটি পাকিস্তানি সবুজ রঙের ব্যবহারকে লাল-সবুজের ওপর ছাপিয়ে দেওয়ার ফল, যা পতাকার প্রতি অসম্মান হিসেবে ধরা হচ্ছে।
অনেকে মন্তব্য করছেন, জাতীয় রঙের এই ধরনের ব্যবহার তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। দেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এবং জাতীয় চেতনা রক্ষা করা সমগ্র সমাজের দায়িত্ব। সমালোচকরা আশঙ্কা করছেন, যদি এমন ঘটনা পুনরায় ঘটে, তা দেশের ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হেয় করার চেষ্টা হিসেবে গণ্য হবে।
অন্যদিকে, কিছু মানুষ মনে করছেন, এটি ডিজাইনার বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভুল। মঞ্চের ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দ্রুত লাল রঙের ওপর সবুজ কাপড় দিয়ে সংশোধন করা হয়েছে। তবে সমালোচকদের মতে, এটি যথেষ্ট নয়। তারা বলছেন, দেশের পতাকা ও জাতীয় রঙের মর্যাদা রক্ষার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
ঢাকা-১৬ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক লিখেছেন, পতাকা অবমাননা মানে দেশকে অবমাননা করা। এটি কোনো দেশপ্রেমিকের পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। দেশের মানুষ, মাটি ও সংস্কৃতি জাতীয়তাবাদী চেতনা, স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গৌরব ধারণ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশবিরোধী শক্তি নানা কৌশলে বাংলাদেশের মর্যাদা খাটো করার চেষ্টা করে। কখনো জাতীয় সংগীতের অবমাননা, কখনো পতাকার প্রতি অশ্রদ্ধা, আবার কখনো জাতীয়তাবাদী পরিচয়কে দুর্বল করে দেখানোর চেষ্টা—সবই একই ধারার ষড়যন্ত্র।
মো. আমির হামজা মন্তব্য করেছেন, জামায়াত সবসময় আলোচনায় থাকতে চায়। তাই সকালে একটি ছবি ভাইরাল করার পর লাল কার্পেটটিকে সবুজ কার্পেট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যেহেতু সমালোচনা হচ্ছে, তাই লাল-সবুজ ডিজাইন করা এড়িয়ে চলাই ভালো ছিল। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আলমগীর হোসেন বলেন, দলটি হয়তো খুব সুপরিকল্পিতভাবে লাল-সবুজকে অবমাননা করতে চেয়েছে। লাল-সবুজের জায়গায় অন্য কোনো রংও ব্যবহার করা যেত। বিষয়টি তার কাছে অগ্রহণযোগ্য এবং তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ইসরাফিল ফারাজী মন্তব্য করেছেন, বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা কখনো কখনো নিজেদের অবস্থানকে নিশ্চিত করতে এমন কর্মকাণ্ডে জড়ান। সমাবেশ শুরুর আগে ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর লাল রঙের ওপর সবুজ কাপড় দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, যারা অজান্তে বা ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় চেতনা ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাদের সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত দলীয় কার্যক্রমে রাখাটা উচিত নয়।
আবুল বাশার বলেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নাকি অজ্ঞতার ফল তা বোঝা জরুরি। লাল-সবুজ রঙের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, সেই রঙের অপব্যবহার দেশের জন্য বড় ধরনের অসম্মান। একজন চারুকলার ছাত্র হিসেবে তিনি মনে করেন, রঙ চেনার ন্যূনতম জ্ঞানও যদি না থাকে, তাহলে এমন কম্বিনেশন ব্যবহার করা উচিত নয়। তিনি বলেন, দেশের পতাকা দেশের অস্তিত্বের প্রতীক, তাই এটি অপমান করা উচিত নয়।
অন্যদিকে, কিছু মানুষের মতে, সবুজের ওপর লাল গালিচা দেওয়া কেবল ডিজাইনার বা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের ভুল ছিল এবং তা দ্রুত ঠিক করা হয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি যথেষ্ট নয়, কারণ জাতীয় রঙের প্রতি অবমাননার এই ঘটনা তরুণ প্রজন্ম কখনো মেনে নেবে না।
সিএ/এমআরএফ


