প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, জাতীয় প্রচেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশি বিচার বিভাগ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। ব্রাজিল, মিশর, প্যালেস্টাইন, নেপাল ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে নতুন অংশীদারিত্ব এবং প্রশিক্ষণ-সহায়ক বিভিন্ন কর্মসূচি বিচার কূটনীতির নতুন অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের উদ্যোগে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনগত ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে সুপরিকল্পিত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে এগোচ্ছে। সারা বিশ্বে আইন পেশায় দ্রুত পরিবর্তন আসছে। ডিজিটাল রূপান্তর, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, তথ্যভিত্তিক শাসনব্যবস্থা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে দেশের আইনজীবীদেরও প্রস্তুত হতে হবে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রচলিত আইনি অনুশীলন আর যথেষ্ট নয়; একটি আধুনিক, কার্যকর ও জনগণকেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তুলতে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা এবং নৈতিক সক্ষমতা অর্জন অপরিহার্য। তিনি বিগত ১৬ মাসে বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইন, সারাদেশের জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও বিভাগীয় আদালতে হেল্পলাইন সার্ভিস, পাইলট প্রকল্প হিসেবে হাইকোর্টের দুটি পেপার-ফ্রি বেঞ্চ, ডিজিটাল অভিযোগ ব্যবস্থাপনা, স্বয়ংক্রিয় কজলিস্ট, দ্রুত মামলা প্রসেসিং সিস্টেম এবং পেপার-ফ্রি পারিবারিক আদালত। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সংস্কারমুখী বিচার বিভাগকে সমর্থন করতে একটি রূপান্তরমুখী বার অপরিহার্য।
প্রধান বিচারপতি ডিজিটাল বিএলডি প্ল্যাটফর্মকে বিচার বিভাগের ডিজিটাল উন্নয়ন অভিযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, এটি প্রশিক্ষণ তদারকি, দক্ষতার মানদণ্ড নির্ধারণ এবং গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একটি তথ্যসমৃদ্ধ বার কাউন্সিল আইন পেশার স্থিতিশীলতা ও স্বচ্ছতা বাড়াবে। তিনি আইনজীবীদের সিপিডি কর্মসূচির গুরুত্বও ব্যাখ্যা করেন। নিয়মিতভাবে জ্ঞান হালনাগাদ করা যুক্তি-উপস্থাপন উন্নত করে, বিচারপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ করে, আদালতের সময় বাঁচায় এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে বিচার বিলম্ব কমে। একজন সুশিক্ষিত আইনজীবী কেবল ক্লায়েন্টের সম্পদ রক্ষা করেন না, বরং কার্যকর বিচারব্যবস্থার অন্যতম স্তম্ভও হন।
আইনজীবীদের বিশেষায়িত আদালতে কাজের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বাণিজ্য আইন, পরিবেশ আইন, ডিজিটাল ও সাইবার আইন, পারিবারিক আইন, জলবায়ু মামলা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক আইনের মতো সমসাময়িক ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন এখন সময়ের দাবি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন এবং সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। স্বাগত বক্তব্য দেন সচিব (জেলা ও দায়রা জজ) মুহাম্মদ কামাল হোসেন সিকদার। বক্তব্য দেন ব্যারিস্টার তাসনুভা শেলী ও ব্যারিস্টার এহসান হক। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
সিএ/এমআরএফ


