জুলাই-অগাস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। একই মামলায় সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনন্দ উদযাপন হিসেবে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। ছাত্ররা ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তকে ন্যায়বিচারের বিজয় হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আদালতের এ রায়ের মাধ্যমে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়মুক্তি বন্ধ হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে ছয়টি অধ্যায়ে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের প্যানেলের অপর সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে জনসমাগম ছিল; উপস্থিত ছিলেন আইনজীবীরা এবং জুলাই-অগাস্টে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড, বাকি দুইটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছে।
মামলার শুনানি চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ বারবার অভিযোগ করেছিল, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী ও সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা। এই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনও আসামি ছিলেন। সাবেক আইজিপি মামুন একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি হিসেবে রাজসাক্ষী হয়েছেন।
মামলায় পাঁচটি মূল অভিযোগ ছিল— উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান; হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ প্রদান; রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে হত্যা; রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা; এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যা। মামলায় ৫৪ জন প্রত্যক্ষদর্শী, আহত ও চিকিৎসক সাক্ষ্য দিয়েছেন। এছাড়া অডিও, ভিডিও, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও জব্দ করা প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ১২ অক্টোবর যুক্তি-তর্ক শুরু হয় এবং ২৩ অক্টোবর শেষ হয়। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আদালতে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান।
সিএ/এমআরএফ


