বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রিসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকসেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে ছেঁড়া-ফাটা নোট পরিবর্তন, সরকারি চালান গ্রহণ, চালান সংক্রান্ত ভাংতি টাকা প্রদানের মতো পাঁচ ধরনের সেবা। প্রাথমিকভাবে এই পরিবর্তনটি মতিঝিল অফিস থেকে শুরু হবে এবং ধাপে ধাপে ঢাকার বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য শাখায় প্রয়োগ করা হবে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকরা এসব সেবা অব্যাহতভাবে পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এই পরিবর্তনের ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে গ্রাহকদের জন্য সেবার ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্রাহক সেবা যেন নির্বিঘ্নে প্রদান হয় তা তদারকির ব্যবস্থা করবে। এছাড়া, গ্রাহকদের সচেতন করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শিগগিরই প্রচারণা চালাবে। ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কেও এই সিদ্ধান্তের বিষয় জানানো হয়েছে।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত ২২ জুন মতিঝিল অফিসের ক্যাশ বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তিনি ক্যাশ বিভাগের আধুনিকায়ন ও নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর বৈঠকে সেবার পরিবর্তনের বিষয় আলোচনা করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে মোট ২৮টি কাউন্টার রয়েছে। এই কাউন্টারগুলোতে সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড এবং অন্যান্য সরকারি সেবা গ্রাহকদের দেওয়া হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই কার্যালয়ের ১২ কাউন্টারে ৩০ নভেম্বর থেকে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি সেবা বন্ধ করা হবে। এতে নগদ টাকা সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড কেনাবেচা, সরকারি ট্রেজারি চালান গ্রহণ, ভাংতি টাকা এবং ছেঁড়াফাটা নোট বদলের সেবা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তবে কিছু সেবা চালু থাকবে। এগুলো হলো—ধাতব মুদ্রা বিনিময়, স্মারক মুদ্রা বিক্রি, অপ্রচলিত নোটের বিরোধ নিষ্পত্তি এবং ব্যাংকের সঙ্গে অন্যান্য লেনদেন। ভবিষ্যতে এই সেবাগুলোরও কীভাবে বন্ধ করা হবে তা গভর্নরের অনুমোদনের পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়া অন্যান্য বিভাগীয় কার্যালয়েও ধাপে ধাপে এসব সেবা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস থেকেও সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড পাওয়া যায়। তবে গ্রাহকরা সুবিধা ও আস্থার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে বেশি ভিড় করেন। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে, যা দেশের মোট সঞ্চয়পত্রের প্রায় ৩০ শতাংশ।
গত মাসে মতিঝিল অফিসে সঞ্চয়পত্রের সার্ভার জালিয়াতি করে ২৫ লাখ টাকার আত্মসাৎ ধরা পড়ে। আরও দুইজনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা শেষ মুহূর্তে আটক করা হয়। এই ঘটনায় চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সার্ভার জালিয়াতির কারণে সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়, এটি সাধারণ নিরাপত্তা ও আধুনিকায়ন উদ্যোগের অংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংক্রান্ত কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক উচ্চ নিরাপত্তা স্তরভুক্ত। তাই বিশেষ নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করতে এবং ব্যাংকের মূল ভবনের নিরাপত্তা উন্নয়নে এসব সেবা ধাপে ধাপে বন্ধ করা হচ্ছে।
সিএ/এমআরএফ


