পাকিস্তানের সংবিধানে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। শনিবার (৮ নভেম্বর) সিনেটে উপস্থাপিত ২৭তম সংশোধনী বিলটি সেনা কাঠামো ও বিচারব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রস্তাব করছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আজারবাইজান সফরকালীন ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে সংশোধনী খসড়ার অনুমোদন দেন, এরপর বিলটি সিনেটের আইন ও বিচারবিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার জানান, এই প্রস্তাব ২০০৬ সালের ‘চার্টার অব ডেমোক্রেসি’র অংশ, যা ১৮তম সংশোধনীর সময় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ২৪৩ ধারা পরিবর্তন করে বিদ্যমান ‘চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটি’ (CJCSC) পদ বিলুপ্ত করে নতুন ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ পদ সৃষ্টি করা হবে। নতুন পদে বর্তমান সেনাপ্রধান একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি ‘ফিল্ড মার্শাল’, ‘মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স’ এবং ‘অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট’ উপাধি আজীবন বহাল থাকবে।
প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’-এর সুপারিশে ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডার নিয়োগ দেবেন। এটি সামরিক নেতৃত্বে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিচারব্যবস্থায়ও আসছে বড় পরিবর্তন। বিল অনুযায়ী, নতুন একটি ‘ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট’ গঠন করা হবে, যা সুপ্রিম কোর্টের কিছু ক্ষমতা ভাগ করে নেবে। এই আদালতে সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে এবং বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা বাড়বে। আদালতের প্রধান বিচারপতির মেয়াদ তিন বছর নির্ধারণ করা হবে।
সংশোধনীর মূল প্রস্তাবগুলো হলো:
- নতুন ‘চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস’ পদ তৈরি হবে (২৭ নভেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর)
- সেনাপ্রধান একই সঙ্গে এই নতুন পদে দায়িত্ব পালন করবেন
- সামরিক উপাধিগুলো (ফিল্ড মার্শাল, মার্শাল অব দ্য এয়ার ফোর্স, অ্যাডমিরাল অব দ্য ফ্লিট) আজীবন বহাল থাকবে
- প্রধানমন্ত্রী সামরিক সুপারিশে ‘ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডার’ নিয়োগ দেবেন
- ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হবে
- আদালতে সব প্রদেশের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে
- বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে
- আদালতের বিচারপতির সংখ্যা নির্ধারণ করবে পার্লামেন্ট
- প্রধান বিচারপতির মেয়াদ হবে তিন বছর
এই সংশোধনী কার্যকর হলে পাকিস্তানের সেনা নেতৃত্ব ও বিচারব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তন ঘটবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সিএ/এমআরএফ


