সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি ঘিরে উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে গত বছরের জুলাইয়ে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলাচলরত তিনটি আন্তঃদেশীয় ট্রেনেও যাত্রী পরিবহন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসার পর দুই দেশের মধ্যে ট্রেন তিনটির চলাচল পুনরায় শুরু করতে ভারতের কাছে দুদফায় আনুষ্ঠানিক চিঠি দেওয়া হলেও নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে ভারত ট্রেন চালাতে রাজি হয়নি। এর ফলে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে আন্তঃদেশীয় মৈত্রী, মিতালি ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ আবারও এই তিনটি ট্রেনের চলাচল শুরু করতে ভারতকে চিঠি পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় রেল যোগাযোগ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আগামী বছরের মার্চে ৩৮তম ‘ইন্ট্রা-গভর্নমেন্ট রেলওয়ে মিটিং’ (আইজিআরএম) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেই মিটিংয়ের প্রস্তুতিমূলক সভায় ভারতকে তৃতীয়বারের মতো চিঠি দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৬ অক্টোবর বাংলাদেশ রেলওয়েতে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতিমূলক সভায় আন্তঃসরকার রেলওয়ের বৈঠকের সূচি নির্ধারণ করা হয় এবং ২৩ অক্টোবর সভার কার্যবিবরণী চূড়ান্ত হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মৈত্রী, মিতালি ও বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেন পুনরায় চালু করার জন্য আগের চিঠির ধারাবাহিকতায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে আবারও চিঠি দেওয়া হবে। একই সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে অতিরিক্ত মালপত্র পরিবহনের জন্য লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত করার প্রস্তাবও ভারতীয় রেলওয়েকে পাঠানো হবে। এছাড়া রাজশাহী-কলকাতা রুটে ট্রেন পরিচালনার অনুমোদনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে চিঠি পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনের নতুন রুটে পদ্মা সেতু ব্যবহারের পরিকল্পনা করছে। এই প্রস্তাবে রাতের বেলা ট্রেন পরিচালনার বিষয়ও উল্লেখ থাকবে। আপ লাইনে ক্রস ওভার তৈরির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম জানিয়েছেন, ভারতের সঙ্গে আলোচনার একমাত্র পদ্ধতি হলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি পাঠানো। এর আগেও চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া মেলেনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দিল্লিতে আইজিআরএমের মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনায় ওঠলেও ভারত নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা উল্লেখ করে ট্রেন চালাতে রাজি হয়নি।
যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হলে ঢাকায় ‘বন্ধ’ থাকা ভিসার প্রক্রিয়াও পুনরায় শুরু করতে হবে। যদিও ভারত এখনও বাংলাদেশকে নিরাপদ মনে করছে না, তাই পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের অনুমতি থাকলেও যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, “আমরা রেলওয়ে থেকে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেব। আমাদের হাতে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ আছে। ভারত চাইলে যে কোনো সময় ট্রেন চালানো সম্ভব।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই দেশের অভ্যন্তরে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। একই সাথে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেনও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১২ আগস্ট সারা দেশে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার তিনটি যাত্রীবাহী ট্রেন এখনও বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে আটটি ইন্টারচেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও শুধু পাঁচটি সচল আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, “এটি মূলত কূটনৈতিক ইস্যু। দুই দেশের সরকার সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টি অগ্রসর করবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই চিঠি দিয়েছে, কিন্তু ভারতের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি।”
সিএ/এমআর


