মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে একসময় যখন ‘ভুয়া ভুয়া’ ধ্বনি উঠছিল, তখনও হয়তো কেউ ভাবেননি—সেই একই মাঠে আবারও ‘রিশাদ রিশাদ’ স্লোগানে মুখর হবে দর্শকসারী। ওয়ানডেতে সাম্প্রতিক দুরবস্থা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে জয়ের হাসি ফিরেছে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের মুখে। রিশাদ হোসেনের দুর্দান্ত লেগ স্পিনে ভর করে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৭৪ রানের বড় জয় পেয়েছে টাইগাররা।
প্রায় দুই বছর পর মিরপুরে ওয়ানডে ফেরার ম্যাচে ২০৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৩৩ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ৯ ওভারে ৩৫ রান খরচে ৬ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন তরুণ লেগ স্পিনার রিশাদ। তার ঘূর্ণি জাদুতেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উইন্ডিজ ব্যাটিং লাইনআপ। ১১ ওয়ানডে নেতৃত্বে এটি মিরাজের দ্বিতীয় জয়।
মিরপুরের কালো মাটির উইকেটকে ঘিরে অনেক সমালোচনা থাকলেও এবার সেটিই হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সাফল্যের হাতিয়ার। টেস্ট ধাঁচের ধীরগতির উইকেটে স্পিনাররাই পার্থক্য গড়ে দেন। ধারাভাষ্যকার পারভেজ মারুফ তো অবাক হয়েই বলেন, ‘দুই বছর আগে এখানে যে পিচ দেখেছিলাম, এখন তা পুরোপুরি ভিন্ন। ঘাস নেই বললেই চলে। এমন উইকেট প্রথমবার দেখলাম।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে শুরুটা ভালোই হয়েছিল। উদ্বোধনী জুটিতে ব্রেন্ডন কিং ও অলিক আথানেজে তুলে ফেলেছিলেন ৫১ রান। কিন্তু রিশাদের আগমনে ম্যাচের চিত্র পাল্টে যায়। আথানেজেকে ফিরিয়েই উইকেটের দেখা পান তিনি। এরপর একে একে কেসি কার্টি, শেরফান রাদারফোর্ড, ব্রেন্ডন কিং, রোস্টন চেজ এবং জেইডেন সিলসকে সাজঘরে ফেরান এই লেগ স্পিনার। তার নিয়ন্ত্রিত স্পিনেই ধসে পড়ে উইন্ডিজ ব্যাটিং।
তবে বাংলাদেশের ব্যাটিংও সহজ ছিল না। ব্যাটাররা শুরুতে দারুণ চাপে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসারদের সামনে। টপঅর্ডারের ব্যর্থতার পর মিডল অর্ডারে কিছুটা ভরসা জোগান তাওহীদ হৃদয় ও নবাগত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন। হৃদয় খেলেন ৫১ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস, আর অঙ্কন যোগ করেন ৪৬ রান। শেষ দিকে রিশাদের ছোট কিন্তু কার্যকর ইনিংস যোগে বাংলাদেশ পৌঁছায় ২০৭ রানে—যা শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হয়।
এই জয়ে ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ জানান, “মিরপুরের কন্ডিশন আমাদের চেনা। আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছি, রিশাদের স্পিনই আজ সব পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।”
সিএ/এমআর