বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা ও মুদ্রাবাজারে অস্থিরতার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগের সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের দাম রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের বাজারেও। গত এক মাসে এক ভরি স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা, যা প্রায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি। তবে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে স্বর্ণের গয়নার বিক্রি কমে গেছে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) জানিয়েছে, আগস্টে ২২ ক্যারেটের প্রতি গ্রাম স্বর্ণের দাম ছিল ১৪ হাজার ৯৪৫ টাকা, যা বুধবার বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৯২৭ টাকায়। অর্থাৎ প্রতি গ্রামে প্রায় তিন হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এক ভরিতে (১১.৬৬৪ গ্রাম) দাম বেড়েছে ৩৪ হাজার ৭৮২ টাকা।
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশেও তা সমন্বয় করতে হচ্ছে, না হলে স্বর্ণ পাচারের আশঙ্কা তৈরি হয়। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে স্বর্ণই যেন ‘দ্বিতীয় মুদ্রা’। ডলারের দরপতন ও ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের দিকে ঝুঁকিয়ে দিচ্ছে।
চীন, ভারতসহ বহু দেশ বর্তমানে স্বর্ণের মজুত বাড়াচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী। ফলে আমদানির খরচ বাড়ছে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও।
এদিকে বিক্রি কমে যাওয়ায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম, গুলশান ও পুরান ঢাকার স্বর্ণের দোকানগুলোতে ক্রেতা কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেকেই পুরনো গয়না গলিয়ে নতুন নকশায় তৈরি করছেন, তবে নতুন গয়না কেনার প্রবণতা স্পষ্টভাবে কমেছে।
বায়তুল মোকাররমের রিয়া জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী নূরে বুলবুল রনি বলেন, “মানুষ আসছে কম। যাদের সামর্থ আছে, তারা কিনছেন। অনেকে ভাবছেন, আরও দাম বাড়বে, তাই ছোট গয়না নিচ্ছেন।”
বাজুসের কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, “স্বর্ণের দাম আমাদের হাতে নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে আমাদেরও বাড়াতে হয়। না হলে দেশের ভেতরে স্বর্ণ টিকবে না।”
ঢাকার বাইরেও বিক্রি কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বর্ণের বেশিরভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে বা চোরাই পথে আসে বলে বাজারে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে স্বর্ণ আমদানি সংক্রান্ত কোনো তথ্যও প্রকাশ করা হয়নি।
সিএ/এমআর