যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি প্রতিশ্রুত ত্রাণের মাত্র এক-চতুর্থাংশ গাজায় প্রবেশ করতে দিয়েছে, বাকী ৭৫ শতাংশই আটকে রেখেছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। এর ফলে গাজায় তীব্র মানবিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে এবং যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৩টি ত্রাণ ও বাণিজ্যিক ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৪৫টি ট্রাক ত্রাণ বহন করতে পারছে, যা নির্ধারিত দৈনিক ৬০০ ট্রাকের মাত্র ২৪ শতাংশ। গাজা প্রশাসনের দাবি, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে, ফলে ২৪ লাখের বেশি মানুষের জীবন ভয়াবহ সংকটে পড়েছে।
গাজার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও খাবার, পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বহু পরিবার এখনো আশ্রয়হীন, ধ্বংসস্তূপে ঘেরা এলাকায় বসবাস করছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় গাজার বহু এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, ইসরায়েলের নির্দেশে রুট পরিবর্তনের কারণে ত্রাণ কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে। এখন ত্রাণবাহী কনভয়গুলোকে মিসরের সীমান্তবর্তী ফিলাডেলফি করিডর হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তায় যাতায়াত করতে হচ্ছে, ফলে যানজট ও বিলম্ব বাড়ছে। তিনি জানান, কার্যকর ত্রাণ বিতরণের জন্য অতিরিক্ত সীমান্তপথ ও অভ্যন্তরীণ রুট চালু করা জরুরি।
এদিকে যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করে ইসরায়েলি বাহিনী শনিবারও গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস এলাকায় বিমান, কামান ও ট্যাংক দিয়ে ব্যাপক হামলা চালায়। এছাড়া উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের পূর্ব দিকে একাধিক আবাসিক ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানান, স্থানীয়রা জানিয়েছেন—ইসরায়েলি ড্রোন ও ভারী গোলাবর্ষণে ঘরবাড়ি ও কৃষিজমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। ড্রোনের অব্যাহত উপস্থিতি ও বোমাবর্ষণের কারণে গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পৌঁছাতেই পারছে না।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২২ ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহল পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও, কার্যকর সমাধান বা মানবিক করিডর চালুর বিষয়ে এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সূত্র: আল জাজিরা
সিএ/এমআরএফ


