ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের মধ্য–দক্ষিণাঞ্চলীয় স্বায়ত্ত্বশাসিত কার্বি আংলং জেলায় কয়েক দিন ধরে চলা সহিংসতায় অন্তত দুজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ৫০ জন, যাঁদের অধিকাংশই আসাম পুলিশের সদস্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিহত দুজনের একজন আদিবাসী আথিক তাইমুং এবং অন্যজন হিন্দু বাঙালি সুরেশ দে (২৫)। সুরেশ দে শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। চলতি সপ্তাহের শুরু থেকেই আদিবাসী ও আদিবাসী নন—এমন দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে সহিংস রূপ নেয়।
সোমবার বিক্ষোভকারীরা স্বায়ত্তশাসিত কার্বি আংলং পরিষদের প্রধান ব্যবস্থাপক ও বিজেপি নেতা তুলিরাম রংহাঙ্গের পৈতৃক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। এর পরদিন মঙ্গলবার সংঘর্ষ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। ওই অঞ্চলের খেরোনি বাজারে আগুন লাগিয়ে পুরো বাজারসহ আশপাশের বহু বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একাধিক গাড়ি ও মোটরসাইকেল ভস্মীভূত হয়। কারফিউ জারি থাকা সত্ত্বেও দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এই সংঘর্ষ মূলত আদিবাসীদের সঙ্গে বাঙালি ও বিহারি জনগোষ্ঠীর মধ্যে হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়দের ভাষ্য, বাঙালিদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করার যে প্রচার গোটা পূর্ব ভারতে চলমান, তার প্রভাবেই সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে। একই সঙ্গে অঞ্চলে বসবাসরত বিহারি শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের ওপরও গত কয়েক মাস ধরে হামলার ঘটনা ঘটছে।
বিহারি শ্রমিকদের বড় একটি অংশ দীর্ঘদিন ধরে ওই অঞ্চলে বসবাস করছেন এবং তাঁদের অনেকেই সেখানে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে গড়ে উঠেছেন। অন্যদিকে আদিবাসীদের অভিযোগ, তাঁদের সম্প্রদায়ভিত্তিক জমিতে বাইরে থেকে এসে লোকজন বসতি গড়ছেন, ফলে আদিবাসীদের জমি ধীরে ধীরে বহিরাগতদের দখলে চলে যাচ্ছে।
যে এলাকায় এই সহিংসতা হয়েছে, তা পশ্চিম কার্বি আংলংয়ের আদিবাসী–অধ্যুষিত পার্বত্য জেলা। অঞ্চলটি দক্ষিণ আসামের বাঙালি–অধ্যুষিত তিন জেলা হাইলাকান্দি, শ্রীভূমি (করিমপুর) ও কাছাড়ের ঠিক উত্তরে অবস্থিত। জেলার পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত।
এ ঘটনার পেছনে ফেলাঙ্গপি এলাকায় চলমান অনশনকেও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখছেন স্থানীয়রা। সেখানে দুই সপ্তাহ ধরে নয়জন আদিবাসী অনশন করছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, বাইরে থেকে এসে যাঁরা বসতি গড়েছেন, বিশেষ করে গবাদিপশু চরানোর জন্য নির্ধারিত জমিতে অবস্থানকারীদের অবিলম্বে উচ্ছেদ করতে হবে।
গত সোমবার অনশনরত ব্যক্তিদের অনশনস্থল থেকে সরিয়ে গৌহাটিতে নেওয়া হয়। স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা মহাপরিদর্শক অখিলেশ সিং জানান, অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করার জন্যই তাঁদের গৌহাটিতে নেওয়া হয়েছে।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, অনশনকারীদের কার্যত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং স্বায়ত্তশাসিত পরিষদের প্রধান ব্যবস্থাপকের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর আদিবাসীরা মূলত ওই অঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের ওপর আক্রমণ চালান। এতে দুজনের মৃত্যু হলেও এখনো কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ বুধবার পরিস্থিতি থমথমে থাকলেও নতুন করে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। নিরাপত্তা জোরদার করতে আধা সামরিক বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।
সিএ/জেএইচ


