প্রায় চার বছর ধরে চলমান রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি নতুন শান্তি প্রস্তাব প্রস্তুত করছে ইউক্রেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই এ প্রস্তাবের কাজ শেষ হবে এবং এরপর মার্কিন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তা রাশিয়ার কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এসব কথা জানান।
যুদ্ধ বন্ধে সর্বশেষ জার্মানির রাজধানী বার্লিনে ইউক্রেনের সঙ্গে বৈঠকে বসে ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র। বৈঠকের দুই দিন পর সোমবার মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার চলমান বিরোধের প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে সমাধান হয়েছে। তবে এরপরও যুদ্ধ অবসানের বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। কারণ, চলমান আলোচনায় সরাসরি অংশ নিচ্ছে না রাশিয়া।
জেলেনস্কি বলেন, যুদ্ধ শেষ হলে ইউক্রেনের জন্য যে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ভোটাভুটির মাধ্যমে অনুমোদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, ‘আজ বা আগামীকালের’ মধ্যেই এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত নথিপত্র প্রস্তুত করা হবে। নথিগুলো চূড়ান্ত হলে সেগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসবে। এই আলোচনা চলতি সপ্তাহান্তেই শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জানান, প্রস্তাবিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তাগুলো পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর অনুচ্ছেদ–৫–এর মতো। তিনি বলেন, আমরা পাঁচটি নথি নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে কয়েকটি ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সংক্রান্ত। এসব নথির কিছু আইনি বাধ্যবাধকতার সঙ্গে যুক্ত, তাই সেগুলো মার্কিন কংগ্রেসে ভোটাভুটির মাধ্যমে অনুমোদন প্রয়োজন।
এ নিরাপত্তা নিশ্চয়তার নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু এখনো প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ বন্ধের পর রাশিয়া আবার ইউক্রেনে হামলা চালালে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে, সে বিষয়েও স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। মার্কিন কর্মকর্তারা শুধু জানিয়েছেন, ইউক্রেনে মার্কিন সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। তবে বার্লিনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর ইউক্রেনের কয়েকটি ইউরোপীয় মিত্র দেশ জানিয়েছে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা সেখানে সেনা মোতায়েন করতে আগ্রহী।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী সের্গেই রিবকভ বলেন, প্রস্তাবিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তাগুলো এখনো ক্রেমলিন দেখেনি। তবে যদি এতে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর সেনা মোতায়েনের কথা উল্লেখ থাকে, তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। যুদ্ধ শুরুর আগ থেকেই এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে মস্কো।
যুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় জটিলতা তৈরি করেছে ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা অঞ্চলগুলো। যুদ্ধ বন্ধের বিনিময়ে দনবাস অঞ্চলের পুরো অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেন এই দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই সংকটের সমাধান কীভাবে হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি সপ্তাহান্তে সম্ভাব্য আলোচনায় ইউক্রেনের প্রস্তাব রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কীভাবে গ্রহণ করবেন, সেটিও অনিশ্চিত।
এর মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে এ কমিশনের কার্যক্রম উদ্বোধনে উপস্থিত হন জেলেনস্কিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান কাজা কালাসও। নেদারল্যান্ডস ও মানবাধিকার সংস্থা কাউন্সিল অব ইউরোপের উদ্যোগে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ভ্যান উইল বলেন, জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে কোনো সংঘাতের পূর্ণ সমাধান সম্ভব নয়। তাঁর মতে, জবাবদিহির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ক্ষতিপূরণ প্রদান। তিনি বলেন, আজ আমরা যে ক্ষতিপূরণ দাবির কমিশন গঠন করছি, এটি একটি বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ।
রাশিয়ার কাছ থেকে এই ক্ষতিপূরণ কীভাবে আদায় করা হবে, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এর আগের আলোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে জব্দ করা রুশ সম্পদ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাব উঠে এসেছিল। নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো এই দাবির ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা যে শেষ পর্যন্ত রাশিয়াকে ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে।
এই কমিশন গঠন নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ক্রেমলিনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে রাশিয়া। একই সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নে জব্দ করা রুশ সম্পদ দিয়ে ইউক্রেনকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাবকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেছে মস্কো।
সিএ/জেএইচ


