ইউরোপ বড় ধরনের সংকটের মুখে রয়েছে বলে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। নতুন প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে (ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজি—এনএসএস) উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যেই ইউরোপ তার ‘পশ্চিমা পরিচয়’ হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। খবর—বিবিসি।
৩৩ পৃষ্ঠার এই কৌশলগত নথিতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক পরিকল্পনা, সামরিক অগ্রাধিকার এবং রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে ট্রাম্প তার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করেছেন। নথিতে বলা হয়েছে, অভিবাসন বৃদ্ধি, জন্মহার কমে যাওয়া, পরিচয়ের সংকট এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা—এসবকে ইউরোপের জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখছে ওয়াশিংটন।
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, কিছু ইউরোপীয় দেশ ভবিষ্যতে হয়তো আমেরিকার নির্ভরযোগ্য মিত্র হিসেবে থাকতেও পারবে না। এমনকি পুরো ইউরোপই এক সময় “অচেনা” হয়ে যেতে পারে। এই নথিকে ট্রাম্প ‘একটি রোডম্যাপ’ হিসেবে উল্লেখ করেন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মানব ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দেশ’ হিসেবে ধরে রাখতে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ইউরোপে তীব্র প্রতিক্রিয়া
নথিতে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণী ও সতর্কবার্তা ভালোভাবে নেয়নি ইউরোপের শীর্ষ নেতারা। বিভিন্ন ইউরোপীয় গণমাধ্যম বলছে, এটি জাতিসংঘে দেওয়া ট্রাম্পের আগের বক্তব্যের সুরই পুনরাবৃত্তি করছে—যেখানে তিনি পশ্চিম ইউরোপের অভিবাসননীতি ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি নীতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন।
বিশেষ করে জার্মানি বিষয়টি মেনে নেয়নি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোহান ভাডেফুল বলেন, জার্মানির “বাইরের পরামর্শের প্রয়োজন নেই”। তিনি আরও বলেন, “ন্যাটো জোটে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা মুক্ত সমাজের কাঠামো—এসব প্রশ্ন কৌশলগত নিরাপত্তা নথিতে থাকা উচিত নয়।”
রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গ
সাধারণত প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাদের মেয়াদে একবার জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল প্রকাশ করেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নীতি, বৈদেশিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা বাজেট নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
নথিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিভিন্ন অতিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করার’ অভিযোগ আনা হয়েছে। ইউরোপে অভিবাসন নীতি উত্তেজনা সৃষ্টি করছে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সেন্সরশিপ দেখা দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া নথিতে “দেশপ্রেমিক ইউরোপীয় দলগুলোর” উত্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখানো হয়েছে এবং জানানো হয়েছে, এই রাজনৈতিক উত্সাহকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে।
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ প্রসঙ্গেও সতর্কতা দেওয়া হয়েছে। নথিতে বলা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পরিচালনায় ইউরোপে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে, এবং এই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
নথির এসব বার্তা পশ্চিমা বিশ্বে উদ্বেগ ও বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে ইউরোপ–আমেরিকা সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।
সিএ/এএ


