প্রায় ৪০ বছর পর সরাসরি আলোচনায় বসেছে লেবানন ও ইসরায়েল। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় লেবাননের আন-নাকুরা শহরে যুদ্ধবিরতি মনিটরিং কমিটির বৈঠকে দুই দেশের বেসামরিক প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নওয়াফ সালাম বলেন, বৈঠকটি নিরাপত্তা ইস্যুর বাইরে গিয়ে আরও বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এটি কোনো শান্তিচুক্তির আলোচনা নয় উল্লেখ করে তিনি জানান, কেবল পূর্ণাঙ্গ শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব।
তিনি জানান, আলোচনার মূল লক্ষ্য হলো শত্রুতা বন্ধ করা, লেবাননিদের মুক্ত করা এবং লেবানিজ ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি লেবানন ২০০২ সালের আরব শান্তি উদ্যোগের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ—যেখানে ১৯৬৭ সালে দখলকৃত সব এলাকা থেকে ইসরায়েলের প্রত্যাহারের বিনিময়ে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের কথা উল্লেখ রয়েছে। লেবানন কোনো আলাদা শান্তিচুক্তি করবে না বলেও তিনি স্পষ্ট জানান।
নওয়াফ সালাম বিশ্বাস করেন, নাগরিক প্রতিনিধির অংশগ্রহণ উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করবে। তিনি সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বিমান হামলার কথা তুলে ধরে বলেন, এসব হামলা সীমান্ত পরিস্থিতিতে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষকে আলোচনা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত মাসে ইসরায়েলের বিমান হামলার পর নতুন করে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কার মধ্যেই এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ইসরায়েল নিয়মিত লেবাননে বিমান হামলা চালালেও তা মূলত হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী দক্ষিণ লেবানন থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহারের কথা থাকলেও এখনও পাঁচটি এলাকায় ইসরায়েলি সেনা অবস্থান করছে। ইসরায়েলের মুখপাত্র শোশ বদ্রোসিয়ান এই বৈঠককে “ঐতিহাসিক অগ্রগতি” হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জানান, হিজবুল্লাহ পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ করছে কি না তা যাচাই, লেবানন সেনাবাহিনীর অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ—এসব বিষয়ও কমিটির আলোচনার অংশ হতে পারে। প্রয়োজনে মার্কিন বা ফরাসি সেনা এতে যুক্ত হতে পারে।
গাজায় ইসরায়েল হামলার পর হিজবুল্লাহর প্রতি অস্ত্রত্যাগের আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে। তবে হিজবুল্লাহ এ আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। নওয়াফ সালাম বলেন, হিজবুল্লাহর অস্ত্র রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও তা ইসরায়েলকে ঠেকাতে পারেনি বা লেবাননকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়নি। তিনি আরও বলেন, সরকার এখন যুদ্ধ ও শান্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেছে এবং লেবানন আর কোনো বেপরোয়া পদক্ষেপে যুদ্ধে জড়াবে না—গাজার উদাহরণ থেকে এ শিক্ষা নেওয়া জরুরি।


