পল্লবী থানা যুবদলের সদস্য সচিব গোলাম কিবরিয়াকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার ঘটনা সারাদেশে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পল্লবীর পুরনো থানার কাছে সি ব্লকের একটি হার্ডওয়্যারের দোকানে মুখোশ ও হেলমেট পরা তিন ব্যক্তি গোলাম কিবরিয়াকে খুব কাছ থেকে গুলি করে পালিয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পর স্থানীয়রা জনি ভুঁইয়া নামে একজনকে হাতেনাতে ধরে। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন, হত্যার জন্য তাদের কয়েকজনকে ভাড়া করা হয়েছিল। পল্লবী থানার পরিদর্শক মোহাম্মদ হানিফ মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) তাকে আদালতে হাজির করলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমান জনির জবানবন্দি নথিভুক্ত করেন।
পুলিশ তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাচ্ছে, যার ভিত্তিতে হত্যার মূল হোতা হিসেবে মফিজুর রহমান মামুন নামে স্থানীয় এক সন্ত্রাসীর নাম উঠে এসেছে। মামুন বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন এবং ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে এই হত্যার ঘটনা ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামুনকে ২০২১ সালে পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ২৭টি মামলা রয়েছে।
এ ঘটনার পর গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার দীনা বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় আসামি হিসেবে জনির সঙ্গে আরও পাঁচজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- সোহেল ওরফে পাতা সোহেল ওরফে মনির হোসেন (৩০), সোহাগ ওরফে কালু (২৭), মাসুম ওরফে ভাগিনা মাসুম (২৮) ও রোকন (৩০)। এছাড়া অজ্ঞাত পরিচয় আরও সাত-আটজনের সম্পৃক্ততার কথাও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পল্লবী এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠে মামুনের অনুসারীরা। তারা জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নানা অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এই কারণে স্থানীয়রা এবং যুবদল নেতারা দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার বিষয়বস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন।
গোলাম কিবরিয়া রাজনৈতিকভাবে পল্লবীতে দ্রুত পরিচিতি অর্জন করেন এবং এলাকার আধিপত্য বিস্তারে প্রভাব খাটাতে থাকেন। পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধান অনুযায়ী, কিবরিয়ার এই প্রভাব এবং মামুনের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বই হত্যার মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, মামুন বিদেশ থেকে একটি পোশাক কারখানার মাধ্যমে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন। কিবরিয়া সেখানে চাঁদা নিতে গেলে তার লোকজন বাধা দেয় এবং পরে মামুন ফোন করে তাকে সেখানে যেতে নিষেধ করেন। এছাড়া মামুন তাকে পল্লবী থানা যুবদলের কমিটিতে কিছু লোক ঢুকানোর জন্য নির্দেশ দেন, যা কিবরিয়া অমান্য করেন। এ কারণে মামুন ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে খুন করার জন্য ভাড়াটে খুনি পাঠান।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা পল্লবী ও ঢাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। পুলিশ অভিযোগ প্রমাণিত হলে হত্যার সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সিএ/এমআরএফ


