শীতের নরম রোদে এক বিকেলে রমনা পার্কে দাঁড়িয়ে থাকা দুই তরুণের কথোপকথন থেকেই বোঝা যায়, ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল এখন আর কেবল ক্যাম্পাসের ভেতরের আয়োজন নয়। একজন তরুণ অন্যজনকে বলছিলেন, ‘কাল স্টেডিয়ামে ফ্রি ফুটবল খেলা দেখলাম। দারুণ লাগল।’ কথায় কথায় জানা গেল, তিনি বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে পাঞ্জাবি বিক্রি করেন। ফুটবল তাঁর খুব প্রিয় হলেও নিয়মিত টিকিট কেটে স্টেডিয়ামে খেলা দেখার সুযোগ হয় না।
সেমিফাইনাল দেখার অভিজ্ঞতার পর ফাইনাল দেখার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। ফাইনালেও টিকিট লাগবে না—এ তথ্য জানার পর খেলা শুরুর সময় জেনে নিতে তাঁদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। এআইইউবি ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার ফাইনালে সেই দুই তরুণকে আলাদা করে চোখে পড়েনি। হয়তো তাঁরা এসেছিলেন, কিন্তু দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভিড়েই হারিয়ে গেছেন।
এই ঘটনা ইঙ্গিত দেয়, ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে সাধারণ ক্রীড়ামোদীদের মাঝেও আগ্রহ তৈরি করতে পেরেছে। তৃতীয়বারের মতো আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট প্রতিবছরই পরিসরে বেড়েছে। প্রথম আসরে অংশ নেয় ৩২টি দল, দ্বিতীয় আসরে ৪২টি এবং এবার ছিল ৪৬টি দল। চাহিদা ছিল আরও বেশি। এবছর খেলতে আগ্রহ দেখিয়েছিল ৭১টি বিশ্ববিদ্যালয়। নানা সীমাবদ্ধতায় ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে, যা আয়োজকদের পক্ষ থেকেও হতাশার বিষয়।

অংশগ্রহণকারী দলের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা এই টুর্নামেন্টের গুরুত্ব বাড়ারই প্রমাণ। এবারের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়াটাও সেই অগ্রগতির আরেকটি দিক। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় দলে বাংলাদেশের শীর্ষ লিগে খেলা ফুটবলাররাও ছিলেন। তাঁদের অনেকের জন্যই জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলার অভিজ্ঞতা ছিল প্রথমবারের মতো, যা প্রাইজমানির চেয়েও মূল্যবান স্মৃতি হয়ে থাকবে।
২০২৩ সালে টুর্নামেন্ট শুরুর সময় লক্ষ্য ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এটিকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফুটবল প্রতিযোগিতায় পরিণত করা। সেই লক্ষ্য অনেকটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সারা বছর এই টুর্নামেন্টের অপেক্ষায় থাকে। অনেক প্রতিষ্ঠান আলাদা করে প্রস্তুতিও নেয়।

এই পথচলায় অবদান রয়েছে অনেকের। টুর্নামেন্ট কমিটিতে থাকা দেশের খ্যাতনামা ফুটবলারদের উপস্থিতি প্রতিযোগিতায় যোগ করেছে আলাদা মাত্রা। পৃষ্ঠপোষক ইস্পাহানি গ্রুপের পাশাপাশি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অবদানও উল্লেখযোগ্য। প্রথম দুটি আসরের ঢাকা আঞ্চলিক ও চূড়ান্ত পর্বের খেলা হয়েছে তাদের মাঠে। এবছরও ঢাকা পর্বের পর চূড়ান্ত পর্বের চারটি কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ সেখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিফাইনাল ও ফাইনালের জন্য জাতীয় স্টেডিয়াম বরাদ্দ দেওয়ায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহযোগিতাও স্মরণযোগ্য।

সবশেষে ধন্যবাদ প্রাপ্য অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয় দলগুলোই। তাদের অংশগ্রহণেই এই টুর্নামেন্ট প্রাণ পায়। একটি আসর শেষ হওয়ার পর থেকেই যারা পরবর্তী আসরের দিন গোনে, তাদের হাত ধরেই ইস্পাহানি-প্রথম আলো আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল হয়ে উঠেছে সারা বছরের অপেক্ষার প্রতিযোগিতা।
সিএ/বিই


