আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিনকে বিভিন্ন নামে নামকরণ করেছেন, যেন মানুষ তা স্মরণে রেখে উপদেশ গ্রহণ এবং এ বিষয়ে চিন্তা করে। এসবের মধ্যে আছে বিচার দিবস, ফায়সালার দিন, হিসাবের দিন, পরিতাপের দিন, মহাসমাবেশের দিন এবং পুনরুত্থান দিবস।
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে উল্লেখ আছে, কেয়ামতের দিন হবে এক ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় দিন। এই ভয়াবহতা কল্পনার বাইরে, যা মানুষের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো হবে।’ (সুরা কারিয়াহ : ৪) অন্য আয়াতে উল্লেখ আছে, ‘যেদিন কেয়ামত উপস্থিত হবে, সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই, মা, বাবা, স্ত্রী ও সন্তান থেকে। তাদের অবস্থা হবে গুরুতর, যা তাদের সম্পূর্ণভাবে ব্যতিব্যস্ত করবে।’ (সুরা আবাসা : ৩৩-৩৭)
আরও বলা হয়েছে, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো। কেয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার। সেদিন প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার শিশুর কথা ভুলে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতী নারী গর্ভপাত করবে। মানুষ মাতালের মতো দেখাবে, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়। আল্লাহর শাস্তি কঠিন হওয়ায় মানুষের অবস্থা এমন হবে।’ (সুরা হজ : ১-২)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি মহানবীকে (সা.) বলতে শুনেছি, কেয়ামতের দিন মানুষ উলঙ্গ হয়ে খতনাহীন অবস্থায় কবর থেকে হাশরের ময়দানে দাঁড়াবে। আমি জিজ্ঞেস করি, নারী-পুরুষ সবাই কি উলঙ্গ থাকবে? উত্তরে হুজুর (সা.) বলেন, ‘হে আয়েশা, সেদিনের পরিস্থিতি এত ভয়ংকর হবে, কেউ কারও দিকে তাকানোর কথা কল্পনা করতে পারবে না।’ (মুসলিম : ৬৯৩৪)
ভয়াবহ কেয়ামত কবে ঘটবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন। তবে রাসুল (সা.) কেয়ামতের কিছু আলামত বলে গিয়েছেন। এগুলো দুই ধরনের – ছোট আলামত ও বড় আলামত।
সর্ববৃহৎ দশটি আলামত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণনা আছে। হজরত হুজাইফা ইবনে উসাইদ (রা.) জানান, আমরা রাসুল (সা.)-এর কামরার ছায়ায় বসে কেয়ামতের বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। তখন রাসুল (সা.) বললেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না এই দশটি নিদর্শন প্রকাশ পায়।
দশটি নিদর্শন হলো:
১. পৃথিবীর পূর্বপ্রান্তে ভূখণ্ড ধ্বস
২. পশ্চিমপ্রান্তে ভূখণ্ড ধ্বস
৩. আরব উপদ্বীপে ভূখণ্ড ধ্বস
৪. ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়া
৫. দাজ্জাল প্রকাশ
৬. দাব্বাতুল আরজ প্রকাশ
৭. ইয়াজুজ-মাজুজ বের হওয়া
৮. পশ্চিমপ্রান্ত হতে সূর্যোদয়
৯. ‘আদন’ দেশের প্রান্ত হতে আগুন উত্থিত হয়ে মানুষকে এক স্থানে একত্রিত করবে
১০. বিভিন্ন বর্ণনায় দশম আলামত হিসেবে উল্লেখ আছে ঈসা (আ.)-এর অবতরণ বা এমন একটি দমকা হাওয়া যা মানুষকে উড়িয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে। (মুসলিম : ৭১৭৮)
সিএ/এমআরএফ


