স্বর্ণ মানব সভ্যতার প্রাচীন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সোনার প্রতি মানুষের আগ্রহ কালের পরিক্রমায় কমেনি। বর্তমান সময়ে এটি সাজ-সজ্জা, আভিজাত্য প্রদর্শন ও ব্যক্তিগত বা সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিয়ে, শাদী, ধর্মীয় বা সামাজিক উদযাপনের সময় স্বর্ণের ব্যবহার সাধারণত বাধ্যতামূলক হিসেবে ধরা হয়। নারীদের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে স্বর্ণের ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ এবং এতে কোনো বিধিনিষেধ নেই।
তবে পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একাধিক হাদিসে বিষয়টি উল্লেখ আছে। উদাহরণস্বরূপ, হজরত আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) রেশম ও স্বর্ণ পরিধান থেকে পুরুষদের বিরত থাকতে বলেছেন। উক্ত হাদিসে বলা হয়েছে, এই দুই জিনিস নারীদের জন্য বৈধ, কিন্তু পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ (সুনান আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৫৭)।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত একটি ঘটনার মধ্যে বলা হয়েছে, মহানবী (সা.) এক সাহাবির হাতে থাকা স্বর্ণের আংটিটি দেখে তা তার হাত থেকে ছুড়ে ফেলেন এবং সতর্ক করেন, যে ব্যক্তি স্বর্ণ পরিধান করবে, জাহান্নামের আগুনের অঙ্গার তার জন্য প্রস্তুত থাকবে (মুসলিম, হাদিস : ২০৯০)।
হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত আরও একটি হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, রেশমি কাপড় বা স্বর্ণ ব্যবহারে ঈমানদার পুরুষদের বিরত থাকতে হবে (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২২৪৮)। এছাড়া, তিরমিজিতে উল্লেখ আছে, রেশম ও স্বর্ণের ব্যবহার পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ, নারীদের জন্য বৈধ।
স্বর্ণ সংরক্ষণ ও যাকাতের বিষয়েও ইসলামে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ কারো মালিকানায় থাকলে তার উপর যাকাত দেওয়া ফরজ। যাকাত না দেওয়ার ফলে কিয়ামতের দিনে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। পবিত্র কোরআনে এই বিষয়ে বলা হয়েছে:
‘হে ঈমানদাররা, নিশ্চয়ই যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। সেদিন জাহান্নামের আগুনে এগুলো উত্তপ্ত করা হবে এবং তাদের কপাল, পাঁজর ও পিঠে দাগ দেওয়া হবে; বলা হবে, এগুলোই তোমরা পুঞ্জীভূত করেছো। কাজেই তোমরা যা পুঞ্জীভূত করেছ, তার স্বাদ ভোগ করো।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৩৪-৩৫)
এক হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহর প্রদত্ত সম্পদের যাকাত না দেওয়ার ফল কিয়ামতের দিনে হবে ভয়ংকর। গচ্ছিত সম্পদ ব্যক্তি ও তার পরিবারকে ক্ষতি করবে এবং সেই সম্পদকে বিষাক্ত সাপের আকারে দেখা যাবে, যা তার চোয়ালের পাশে আক্রমণ করবে এবং বলবে, ‘আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার গচ্ছিত ধন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪০৩)
সারসংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামে স্বর্ণ ব্যবহারে ও সংরক্ষণে নির্দিষ্ট বিধিনিষেধ রয়েছে। নারীদের জন্য এটি সৌন্দর্য ও আভিজাত্যের অংশ হলেও পুরুষদের জন্য এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এছাড়া স্বর্ণের মালিকানায় যাকাত প্রদান ফরজ, না দিলে কঠিন শাস্তি নিশ্চিত।
সিএ/এমআর


