শুক্রবারের সন্ধ্যা। বন্ধুদের গ্রুপ চ্যাটে নোটিফিকেশনের পর নোটিফিকেশন। কেউ নতুন রেস্তোরাঁয় যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে, কেউ আবার লং ড্রাইভের প্ল্যান করছে। আর আপনি? মনে মনে শুধু একটাই কামনা—আজ যদি কোনো অজুহাতে এই প্ল্যানটা বাতিল হয়ে যেত!
কারণ, আপনার কাছে নিজের ঘরই সবচেয়ে নিরাপদ, সবচেয়ে শান্ত জায়গা।
আপনি হয়তো উচ্চস্বরে আড্ডা, ভিড় বা রাত জাগা পার্টি খুব একটা পছন্দ করেন না। বরং প্রিয় কম্বলের নিচে শুয়ে বই পড়া, গান শোনা বা নেটফ্লিক্সে একটা সিরিজ দেখাই আপনার কাছে পরম স্বস্তি। বাইরে বেরোনোর চিন্তাটাই আপনাকে ক্লান্ত করে ফেলে।
সমাজ হয়তো আপনাকে “ঘরকুনো”, “বোরিং” কিংবা “অসামাজিক” বলে। অনেক সময় আপনি নিজেও স্বীকার করতে ভয় পান—একাই থাকতে আপনার সবচেয়ে ভালো লাগে।
কিন্তু সত্যিটা হলো, এই অনুভূতিতে আপনি একা নন। আর মনোবিজ্ঞানের চোখে এটা কোনো দুর্বলতা নয়—বরং একেবারেই স্বাভাবিক একটি ব্যক্তিত্বের ধরন।
আপনি আসলে ‘হোমবডি’
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় যাঁরা ঘরে থাকতে ভালোবাসেন, তাঁদের বলা হয় হোমবডি। এরা বাইরের সামাজিক কোলাহলের চেয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত জগতে বেশি স্বস্তি খুঁজে পান।
হোমবডিদের একটা অলিখিত নিয়ম আছে—প্রায় ‘ফাইট ক্লাব’-এর মতো:
নিজের ঘরে থাকার আনন্দের কথা প্রকাশ্যে বলা যাবে না।
কেন? কারণ সমাজ আমাদের শিখিয়েছে—যারা সব সময় বাইরে ঘোরে, পার্টি করে, ছবি তোলে; তারাই নাকি সুখী। আর যারা ঘরে থাকে, তারা হয় একাকী, নয়তো হতাশায় ভুগছে।
এই ভ্রান্ত ধারণার কারণেই অনেক হোমবডি নিজেদের স্বভাব লুকিয়ে রাখেন।
আসলে বিষয়টা ঠিক উল্টো
মনোবিজ্ঞান বলছে, ঘরে থাকতে ভালোবাসা অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চ আত্মসচেতনতার লক্ষণ।
হোমবডিরা জানেন, কোন পরিবেশে তারা মানসিকভাবে ভালো থাকেন
তারা অপ্রয়োজনীয় সামাজিক চাপ এড়িয়ে নিজের শক্তি বাঁচাতে পারেন
তারা একা থাকতে ভয় পান না—বরং সেটাকে উপভোগ করতে পারেন
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা একা সময় কাটাতে পারে, তারা সাধারণত বেশি ক্রিয়েটিভ, গভীর চিন্তাশীল এবং মানসিকভাবে স্থিতিশীল হন।
হোমবডি মানেই অন্তর্মুখী? সব সময় না
সব হোমবডি যে ইনট্রোভার্ট, এমন নয়। অনেক এক্সট্রোভার্ট মানুষও আছেন, যারা দিনের শেষে ঘরেই ফিরতে চান। পার্থক্যটা হলো—
হোমবডিরা বাইরে থেকে শক্তি নেন না, বরং নিজের জায়গায় ফিরে শক্তি রিচার্জ করেন।
ঘরে থাকা মানেই একাকীত্ব নয়
একাকীত্ব আর একা থাকা—দুটো এক জিনিস নয়।
একাকীত্ব আসে যখন আপনি সম্পর্ক চান কিন্তু পান না।
আর হোমবডিরা একা থাকেন কারণ তারা সেটাই চান।
এটা পালিয়ে থাকা নয়, বরং নিজের সীমা বোঝার ক্ষমতা।
তাহলে কি দোষের কিছু আছে?
একদমই না।
যদি—
আপনি ঘরে থাকতে ভালোবাসেন
নিজের সময় নিজে কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন
অযথা সামাজিক চাপ এড়িয়ে চলেন
তাহলে আপনি অসামাজিক নন। আপনি কেবল জানেন, আপনার শান্তি কোথায়।
পরের বার কেউ যদি বলে,
“এত ঘরে থাকো কেন?”
মনে মনে শুধু হাসুন।
কারণ আপনি জানেন—
আপনি বোরিং নন,
আপনি সচেতন।
আপনি হোমবডি।
সিএ/জেএইচ


