দেশে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, প্রতি তিনজন মানুষের মধ্যে একজন কোনো না কোনোভাবে উচ্চ রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসারের সমস্যায় ভুগছেন। তবে এই রোগ থাকলেই যে স্বাভাবিক জীবন থেমে যায়, তা নয়। চিকিৎসকদের মতে, নিয়ম মেনে চললে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রেখেই সুস্থ জীবনযাপন সম্ভব। বিশেষ করে শীতকাল এলেই অনেকের রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এই সময়ে ভ্রমণে যাওয়া বা দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত থাকাদের জন্য কিছু বিশেষ পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, কোনো পরিস্থিতিতে যদি হঠাৎ ব্লাড প্রেসার ১৫০-এর বেশি হয়ে যায়, তাহলে যেকোনো ব্র্যান্ডের ৫ মিলিগ্রামের একটি অ্যামলোডিপিন খাওয়া যেতে পারে। এই ওষুধ কিডনির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। অ্যামলোডিপিন সেবনে সামান্য পা ফুলে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে, তবে চিকিৎসকের কাছে ফলোআপ করলে সেটিও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
এই কারণেই যারা নিয়মিত ব্লাড প্রেসারের রোগী, তারা ভ্রমণের সময় অতিরিক্ত অ্যামলোডিপিন ট্যাবলেট সঙ্গে রাখলে নিরাপদ থাকবেন। আবার যারা এখনো প্রেসারের রোগী নন, কিন্তু পারিবারিকভাবে এই রোগের ইতিহাস আছে, তারাও শরীরে অস্বস্তি অনুভব করলে অন্য কোনো প্রেসারের ওষুধ না খেয়ে অ্যামলোডিপিন সেবন করতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগীর হৃদযন্ত্র, কিডনি বা অন্য কোনো শারীরিক জটিলতা থাকলেও অ্যামলোডিপিন তুলনামূলকভাবে বেশি নিরাপদ।
ব্লাড প্রেসারের রোগীদের সুস্থ থাকতে কয়েকটি বিষয় নিয়মিত মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। বছরে অন্তত একবার কিডনির কার্যকারিতা ও ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করানো জরুরি। যদি কিডনি পরীক্ষার রিপোর্টে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়, তাহলে বছরে তিনবার পর্যন্ত এই পরীক্ষা করাতে হবে। গ্রীষ্মকালে শরীর থেকে লবণ ও খনিজ উপাদান বেরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকায় সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করার কথাও বলেছেন তারা।
চিকিৎসকদের মতে, দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত প্রেসারের কারণে চোখের ক্ষতি হতে পারে। তাই বছরে একবার চোখ পরীক্ষা করানো উচিত। তবে প্রেসার ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকলে এবং চোখে কোনো সমস্যা না থাকলে পাঁচ বছরে একবার পরীক্ষা করালেও চলবে। আর প্রেসার অনিয়ন্ত্রিত হলে বছরে অন্তত একবার চোখ পরীক্ষা করাতেই হবে। নিজে নিজে পরীক্ষা করার জন্য একটি চোখ ঢেকে অন্য চোখ দিয়ে দেখার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।
এ ছাড়া প্রেসারের রোগীদের ইসিজি করানোর কথাও বলেছেন চিকিৎসকরা। হৃৎপিণ্ডের নিচের অংশের পেশি প্রাচীর ঘন বা পুরু হয়ে যাচ্ছে কি না, অর্থাৎ হৃদযন্ত্র রক্ত পাম্প করতে অসুবিধায় পড়ছে কি না, তা ইকোস্ক্রিনের মাধ্যমে সবচেয়ে ভালোভাবে জানা যায়। যাদের দীর্ঘদিন ধরে প্রেসার বেশি থাকে এবং যাদের বয়স ৬০ বছরের ওপরে, তাদের বছরে অন্তত একবার ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম ও ইকোকার্ডিওগ্রাফি করানো প্রয়োজন।
জ্বরের সময় প্রেসারের রোগীদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের মাত্রা সমন্বয় করার কথাও বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। জ্বর হলে অনেক সময় ব্লাড প্রেসার কমে যায়, ফলে তখন প্রেসারের ওষুধের চাহিদাও কমে যেতে পারে। পাশাপাশি শীতকালে নিয়মিত ব্লাড প্রেসার মাপার ওপরও জোর দিয়েছেন তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি কারো রক্তচাপ ঘনঘন বাড়ে বা কমে, তাহলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। রক্তচাপের এই ওঠানামার পেছনে কী কারণ রয়েছে, তা দ্রুত শনাক্ত করা এবং সেই কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা নেওয়াই সুস্থ থাকার প্রধান উপায়।
সিএ/এএ


