নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়াকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক খন্দকার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে এক পোস্ট শেয়ার করে ক্যাপশনে তিনি বেগম রোকেয়াকে ‘মুরতাদ কাফির’ উল্লেখ করেন। তার এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি করেছে।
তার পোস্টের স্ক্রিনশট শেয়ার করে রাকসুর সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদের প্রার্থী মামুনুজ্জামান স্নিগ্ধ লিখেছেন, “নারী শিক্ষার অগ্রদূত রোকেয়াকে কাফের-মুরতাদ বলার মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিহাসের বিভিন্ন সময় ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে নারীদের নিপীড়ন করা হয়েছে; রোকেয়া তারই বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন।”
অন্যদিকে জনপ্রিয় অ্যাক্টিভিস্ট সাদিকুর রহমান খান মন্তব্য করেন, “প্রায় ১০০ বছর আগে মৃত্যুবরণ করা একজন নারীশিক্ষা আন্দোলনের নেত্রীকে এখনো গালিগালাজ করতে হয়—এতেই বোঝা যায় তিনি কতটা সফল ছিলেন।”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পরমা পারমিতা বলেন, “বেগম রোকেয়া নারীশিক্ষা, মানবিক মূল্যবোধ ও সাম্যের আন্দোলনের অগ্রদূত। তিনি কখনোই ধর্মবিদ্বেষী ছিলেন না। অজ্ঞতা, কুসংস্কার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল—যা সকল ধর্মই সমর্থন করে। ব্যক্তিকে ধর্মীয় গালি দেওয়া কেবল অসম্মানজনকই নয়, বরং অগ্রহণযোগ্য।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান জানান, তিনি এক ব্যক্তি সাজিদ হাসানের পোস্ট শেয়ার করে ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকেই ওই মন্তব্য করেছেন। তার দাবি, “পোস্টটি পড়ে আমার মনে হয়েছে বেগম রোকেয়া ইসলামবিদ্বেষী ছিলেন।”
মন্তব্যের ব্যাখ্যা চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এই বিষয়গুলো যাচাই করতে বড় আলেমদের কাছে যেতে হবে। তারা ব্যাখ্যা দিলেই বোঝা যাবে তিনি কাফের বা মুরতাদ ছিলেন কি না।”
অন্যদিকে, বেগম রোকেয়ার লেখাগুলো পড়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি উপন্যাস পড়ার কথা উল্লেখ করেন। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত সাজিদ হাসানের পোস্টে রোকেয়ার রচনাবলি থেকে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত নানা অংশ খণ্ডিতভাবে তুলে ধরা হয়েছিল, যার ভিত্তিতে রাবি শিক্ষক মন্তব্যটি করেন।
এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব বলেন, “এটি তার ব্যক্তিগত মতামত। অনেকেরই এটি ভালো লাগবে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ধরনের মন্তব্য সমর্থন করি না।”
সিএ/এএ


