দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ডলার কেনাকে অন্যতম বড় বাধা হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি প্রশ্ন তুলেছে—যখন বাজারে মূল্যস্ফীতি এখনো বেশি, তখন কেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আপাতত ডলার কেনা বন্ধ রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকে আইএমএফ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রো ইকোনমিকস বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিউ নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর ড. হাবিবুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. এজাজুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তা।
বৈঠকে আইএমএফ জানতে চায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কবে নীতি সুদহার (Policy Rate) কমাবে। জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এলে তবেই নীতি সুদহার কমানো হবে। বর্তমানে পলিসি রেট ১০ শতাংশ, যেখানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণে ১৩-১৪ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে এবং জানুয়ারিতে নতুন ধান উঠলে খাদ্যদ্রব্যের দাম কমবে। তখন নীতি সুদহারে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে।
গত কয়েক মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক অকশন পদ্ধতিতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি কিনেছে। এ বিষয়ে আইএমএফ জানতে চায়—ডলার কেনার ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়ছে, এতে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে না কি? কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ব্যাংকগুলোর হাতে অব্যবহৃত ডলার থাকায় দর হঠাৎ কমে যাওয়ার আশঙ্কায় সেই সময় ডলার কেনা হয়েছিল, তবে এখন আর কেনা হচ্ছে না।
বৈঠকে আইএমএফ বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য প্রকাশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে। আগের সরকারের সময়ে কিছু তথ্য গোপন রাখা হলেও এখন তা প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
সূত্র জানায়, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত অনুযায়ী সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। কিন্তু জুন শেষে দেশের মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা, যা এক বছরে প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা বেড়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপির হার ৪০ শতাংশের বেশি এবং বেসরকারি ব্যাংকেও তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
আইএমএফ প্রতিনিধিদল মুদ্রানীতি, তারল্য সংকট, পুনর্মূলধন, প্রভিশন ঘাটতি ও বৈদেশিক মুদ্রার অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই বিনিয়োগ ও সবুজ অর্থনীতিতে বাংলাদেশের উদ্যোগ সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র শাহরিয়ার সিদ্দিকী বলেন, আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশন নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করছে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সুদের হার, রিজার্ভ ব্যবস্থাপনা ও খেলাপি ঋণ কমানোর পদক্ষেপে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
আইএমএফ জানায়, বর্তমান সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য সংস্থাটি আগামী ১২ মাসের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে।
সিএ/এমআর


 
                                    
